বাজারে নতুন পোশাকে শীতের আমেজ


Assroy প্রকাশের সময় : নভেম্বর ৪, ২০২৩, ১:২০ অপরাহ্ন /
বাজারে নতুন পোশাকে শীতের আমেজ

প্রকৃতিতে এখন হেমন্তকাল। শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে এ ঋতু। আর হেমন্তের শুরুতে বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতের নতুন পোশাক। রাজধানীতে পথের পাশে ব্যবসায়ীদের শিশুদের শীতের পোশাক নিয়ে বসতে দেখা যাচ্ছে।

রাজধানীর বেশ কিছু মার্কেটে সারা বছরই শীতের পোশাক বিক্রি হয়। তবে রাস্তার পাশে ফুটপাতের দোকানগুলোর চিত্র ভিন্ন। তারা মূলত সিজনাল পোশাক বিক্রি করেন। বলা যায় ঋতুর সঙ্গে মানানসই পোশাক বিক্রি করেন এই অস্থায়ী বিক্রেতারা। এখন যেমন হাঁকডাক দিয়ে শুরু হয়েছে শীতের পোশাক বিক্রি। রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটলেই চোখে পড়ে শিশুদের বাহারি রঙের শীতের জুতা, মোজা, কানটুপি, সোয়েটার, হুডি, জ্যাকেট, পায়জামা, ফুলহাতা গেঞ্জিসহ নানান পোশাক। তবে এসব বিক্রেতা এখনও বড়দের শীতপোশাক বিক্রি শুরু করেননি।

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকার সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রেতারা কেউ রেকর্ডেড হ্যান্ড মাইকে আবার কেউ গলা ফাটিয়ে ডাকছেন ক্রেতাদের। বিক্রেতাদের ডাকে সাড়া দিয়ে থামছেন ক্রেতারাও। কেউ কিনছেন, কেউ শুধু দেখে চলে যাচ্ছেন।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা শীতের পোশাক বিক্রি শুরু করেছেন সপ্তাহখানেক ধরে। এর আগে তারা বিক্রি করেছেন শিশুদের গ্রীষ্মকালীন পোশাক। তবে এখনও সেভাবে শীতের পোশাক বিক্রি শুরু হয়নি বলে জানান বিক্রেতারা।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শিশুদের শীতের পোশাক বিক্রেতা মো. শওকত বলেন, আমি শীতের পোশাক বিক্রি শুরু করেছি তিন সপ্তাহ ধরে। বেচাকেনা তেমন একটা হয় না। কারণ, ঢাকায় এখনও শীত সেভাবে শুরু হয়নি। যেগুলো বিক্রি হয় সেগুলো যারা গ্রামে (ঢাকার বাইরে) যান তারা কিনে নিয়ে যান।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণির বিক্রেতা মো. শিশির বলেন, ১০-১২ দিন হলো আমি শীতের পোশাক বিক্রি শুরু করেছি। তেমন বেচাকেনা হয়নি। আশা করছি কয়েক দিন পরে বিক্রি বাড়বে। এখন হালকা শীতের পোশাক বিক্রি করছি। কয়েক দিন পরে বেশি শীতে পরা পোশাক তুলবো।

স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এই অস্থায়ী দোকানগুলোই কেনাকাটায় ভরসার জায়গা। তারা এখান থেকে প্রয়োজনীয় কাপড় কিনতে পারেন তুলনামূলক কম দামে। এখানে ছোটদের পায়জামা ৩০ টাকা, গেঞ্জি ৬০ টাকা, জুতা ৪০ থেকে ১২০ টাকা, মোজা ২৫ টাকা, টুপি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, জ্যাকেট ও হুডি ২০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময়ে এসব দোকানে গেঞ্জি ১০০ টাকা আর পায়জামা ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই তুলনায় এবার দাম কিছুটা কম। তবে জাঁকিয়ে শীত পড়লে সব কাপড়ের দামিই বাড়বে বলে জানান বিক্রেতারা।

অস্থায়ী এসব দোকানে গিয়ে দেখা যায়, শহরকেন্দ্রিক ক্রেতারা সন্তানদের জন্য কিনছেন ফুলহাতা গেঞ্জি। তারা সোয়েটার বা জ্যাকেট কিনছেন না। ক্রেতাদের ভাষ্য, ঢাকায় সোয়েটার পড়ার মতো শীত এখনও আসেনি।

এমনই এক ক্রেতা জাহিদ হোসেন। তিনি তার সন্তানের জন্য ফুলহাতা গেঞ্জি কেনেন। জাহিদ বলেন, ঢাকায় এখন রাতে হালকা ঠান্ডা পড়ে। তাই মেয়ের জন্য কয়েকটা ফুলহাতা গেঞ্জি কিনেছি।

রাজধানীর একটি ছাপাখানায় কাজ করেন রাজিব। তিনি তার সন্তানের জন্য ফুলহাতা গেঞ্জি আর প্যান্ট কিনছিলেন গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারের পাশে থেকে। এখানে কম দামে শিশুদের পোশাক পাওয়া যায়, তাই এখান থেকেই কেনাকাটা করেন বলে জানান তিনি। রাজিব বলেন, একটু সামনে গেলে বড়দের গেঞ্জিও পাওয়া যায়। সেখান থেকে মাঝে মাঝে নিজের জন্য কিনি।

রাস্তার পাশের এই দোকানগুলোর পোশাকের দাম হয়তো টাকার অঙ্কে অনেকের কাছেই কম। তারপরও অনেক ক্রেতা এমনও আছেন যাদের কাছে এই মূল্যও বেশি। কিছুটা কম দামের আশায় তাদের অনেককেই দাম-দর করে কেনাকাটা করতে দেখা যায়।

মাদারীপুর যাচ্ছিলেন সোবাহান শরীফ। যাওয়ার পথে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে নাতির জন্য কেনেন দুটি সোয়েটার। তিনি বলেন, ৪০০ টাকায় দুটি সোয়েটার কিনেছি। কম রাখলো না। দাম করতে গেলেই বলে, সব কিছুর দাম বেড়েছে। গত বছর মাদারীপুর শহর থেকেই এরকম সোয়েটার কিনেছিলাম ৩৫০ টাকায়। ঢাকায় দাম আরও কম হওয়ার কথা, কিন্তু বেশি দিয়ে কিনলাম।

বিক্রেতা শরীফুল বলেন, গত বছর এই সময়ে এগুলোর (ফুলহাতা গেঞ্জি ও প্যান্ট) দাম আরও বেশি ছিল। গত বছর গেঞ্জি বিক্রি করেছি ১০০ টাকা আর পায়জামা বিক্রি করেছি ৫০ টাকায়।

এসব পোশাক ব্যবসায়ীরা কোথা থেকে আনেন জানতে চাইলে বিক্রেতা মো. আজিম বলেন, আমি ফুলহাতা গেঞ্জি ও প্যান্ট আনি নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টস থেকে। একসঙ্গে বস্তা ধরে কিনে আনি। এগুলোতে কিছুটা উনিশ-বিশ (ত্রুটিযুক্ত) থাকে বলে কম দামে কিনে এনে কম দামেই বিক্রি করতে পারি।