আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনিকে বরখাস্ত করার পরিকল্পনা করছে ইউক্রেন। যুক্তরাষ্ট্রকে এমনটাই জানিয়েছে দেশটির সরকার। জালুঝনি ইউক্রেন যুদ্ধের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করছেন। শুক্রবার (২ জানুয়ারি) রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছে বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত দুইটি সূত্র। এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ এই বার্তা সংস্থাটি এই খবর জানিয়েছে।
গত বছর রুশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে একটি পাল্টা আক্রমণ করে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবে এ আক্রমণে অঞ্চলটিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হয় তারা। এরপর থেকেই জালুঝনিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া, বিভিন্ন বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন জালুঝনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলেনস্কির কার্যালয়ের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, নতুন সেনা মোতায়েনের বিষয় নিয়ে দুইজনের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছিল। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে আরও ৫ লাখ সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন জালুঝনি। তবে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সেটি প্রত্যাখ্যান করেন।
ঘনিষ্ঠ সূত্রটি জানিয়েছে, জালুঝনির সেনা বাড়ানোর প্রস্তাবটি জেলেনস্কি প্রত্যাখ্যান করার কারণ, তিনি মনে করছেন তাদের সেনাবাহিনীতে পর্যাপ্ত কর্মী রয়েছেন। তাদেরকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাবে। এখন সেনার সংখ্যা বৃদ্ধির ‘কোনও প্রয়োজন নেই।’
জালুঝনিকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়াটি আপাতত স্থগিত ছিল বলেও জানিয়েছে সূত্রটি। কেননা, উভয় পক্ষই তাদের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নিয়ে কাজ করছেন। তবে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে কতটা সময় লাগতে পারে তা স্পষ্ট নয়।
হোয়াইট হাউজের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে সূত্রটি বলেছেন, মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেনকে জানিয়েছেন, জালুঝনিকে বরখাস্ত করার বিষয়ে বিরোধিতা করছেন না তারা।
তবে অপর সূত্রটি জানিয়েছে, জালুঝনিকে বরখাস্ত করার পরিকল্পনার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি হোয়াইট হাউজ।
এ বিষয়ে কথা বলার আগে পরিচয় গোপন রাখার শর্ত দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, এ বিষয়ে হোয়াইট হাউজের অবস্থান এমন ছিল—আমরা তাদের সার্বভৌম সিদ্ধান্তকে সমর্থন করিনি আবার এর বিরোধিতাও করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘হোয়াইট হাউজের প্রতিক্রিয়া এমন, নিজেদের কর্মীদের সম্পর্কে সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি একান্তই ইউক্রেনের উপর নির্ভর করে। ’
জালুঝনিকে বরখাস্তের পরিকল্পনাটি হোয়াইট হাউজকে ইউক্রেনের অবহিত করার বিষয়ে প্রথম খবর প্রকাশ করেছিল মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট।
বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিনএনএন জালুঝনির একটি কলাম প্রকাশ করেছে। সেখানে জালুঝনি বলেছেন, পর্যাপ্ত সেনা মোতায়েনে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে গোলাবারুদের গুরুতর সংকটে রয়েছে ইউক্রেন বাহিনী। দেশটির বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকেও অস্ত্রের সরবরাহ কমে গেছে।
ইউক্রেনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন জালুঝনি। সেখানে ‘আয়রন জেনারেল’ নামে খ্যাত তিনি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পদ থেকে তার অপসারণ রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা সেনাদের মনোবল ভেঙ্গে দিতে পারে।
পশ্চিমা এবং ইউক্রেনীয় মিডিয়া রিপোর্টের জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে জেলেনস্কির করা পদত্যাগের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন জালুঝনি।
আপনার মতামত লিখুন :