মিয়ানমারের ভারত-সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় বিদ্রোহীরা


Assroy প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৪, ২০২৩, ৩:৫৩ অপরাহ্ন /
মিয়ানমারের ভারত-সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় বিদ্রোহীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মিয়ানমারের চিন রাজ্যের জান্তাবিরোধী যোদ্ধারা ভারত সীমান্তের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে। দুটি সামরিক ফাঁড়ি দখলের পর সামরিক শাসনের বিরোধীরা এই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিদ্রোহীদের এক সিনিয়র কমান্ডার। মঙ্গলবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

সামরিক সরকারবিরোধী চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (সিএনএফ)-এর ভাইস চেয়ারম্যান সুই খার বলেছেন, সোমবার ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিয়ানমারের সেনাদের সঙ্গে তাদের যোদ্ধারা লড়াই করেছে। ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সীমান্তে মিয়ানমার অংশে দুটি ফাঁড়ি দখল নিতে সক্ষম হয়েছে যোদ্ধারা। জান্তার বিরুদ্ধে অভিযান বিস্তৃত করার অংশ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়।

মিয়ানমারের সামরিক সরকার ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেনি রয়টার্স।

২০২১ সালে ক্ষমতা দখল করা মিয়ানমার জান্তা সম্প্রতি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অক্টোবরের শেষ দিকে তিনটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী সমন্বিত আক্রমণ শুরু করেছে। কয়েকটি গ্রাম ও সামরিক ফাঁড়ি দখল করেছে বিদ্রোহীরা।

বিদ্রোহীরা এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন ১০২৭’। শুরুতে চীনা সীমান্তবর্তী শান রাজ্যে জান্তা নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সাফল্য পায় তারা। ওই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি শহর এবং শতাধিক সামরিক ফাঁড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সেনাবাহিনী।

এই অভিযানে জড়িত থাকা মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মির মুখপাত্র কিয়াও নাইং বলেন, উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে আমাদের হামলা অব্যাহত রয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন এবং চিন রাজ্যে এই সপ্তাহে দুটি নতুন ফ্রন্টে লড়াই শুরু হয়েছে, যা হাজার হাজার মানুষকে মিজোরামে পালিয়েছে।

সুই খার বলেন, প্রায় ৮০ জন বিদ্রোহী সোমবার ভোর ৪টার দিকে চিনের রিহখাওদার এবং খাওমাউই সামরিক ক্যাম্পে হামলা চালায়, অবশেষে কয়েক ঘণ্টার লড়াইয়ের পর উভয় ফাঁড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

তিনি বলেন, চিন বিদ্রোহীরা এখন ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে তাদের নিয়ন্ত্রণ সুসংহত করতে চাইছে, যেখানে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর আরও দুটি ক্যাম্প রয়েছে। আমরা এগিয়ে যাবো। আমাদের কৌশল হলো গ্রাম থেকে শহর, শহর থেকে রাজধানী।

চিন রাজ্য অনেক বছর ধরে শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের পরে হাজার হাজার বাসিন্দা অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। এদের বেশিরভাগকে সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দেয় সিএনএফ।

আংশিকভাবে ঘনিষ্ঠ জাতিগত সম্পর্কের কারণে চিন বিদ্রোহ ভারতের মিজোরামের স্থানীয়দের সমর্থন পায়। মিয়ানমার থেকে কয়েক হাজার মানুষ বিতাড়িত হয়ে রাজ্যটিতে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কয়েকজন কর্মকর্তাও রয়েছেন।

রাস্তায় ট্যাংক

রাখাইনের রাজধানী সিত্তওয়ের একজন বাসিন্দা সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যটিতে বিস্ফোরণের পর শহরের রাস্তায় সেনাবাহিনীর ট্যাংক দেখা গেছে।

সামরিক সরকার সিত্তওয়েতে কারফিউ জারি করেছে। বাসিন্দাদের রাত ৯ টার পরে তাদের বাড়ি থেকে না বের হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একটি সরকারি নথি ও সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, দোকানগুলোকে অবশ্যই রাত সাড়ে আটটার বন্ধ করতে হবে। না হলে আইনি পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে হবে।

নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেন, আমরা শহরের চারপাশে ট্যাংক ঘুরতে দেখছি। আজ অনেক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। স্কুল খোলা আছে কিন্তু পরিবারগুলো শিশুদের স্কুলে পাঠায়নি।

দুই বাসিন্দা ও আরাকান আর্মির (এএ) একজন মুখপাত্রের মতে, রাখাইনের রাথেদাউং এবং মিনবিয়া শহরে সামরিক ফাঁড়ি দখলে লড়াই চলছে।

রাথেদাউংয়ের একজন বাসিন্দা মঙ্গলবার রয়টার্সকে বলেছেন, এলাকাটি রাতারাতি কামানের গোলাগুলির অধীনে চলে  এসেছে। সেনারা শহরে প্রবেশ করেছে। সোমবার রাতে রাথেদাউং শহরের একটি রাস্তায় কামানের গোলা পড়েছে। হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই বাসিন্দা বলেন,  মানুষ শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে। সেনারা এখন শহরে আছে।

দেশটির জান্তা মনোনীত প্রেসিডেন্ট গত সপ্তাহে বলেছিলেন, বিদ্রোহ দমনে অকার্যকর উদ্যোগের কারণে মিয়ানমার ভেঙে পড়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। সামরিক কর্মকর্তাদের দাবি, তারা ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।