অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের আগ্রাসন চলছে। চলমান এই যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই জন্ম নিচ্ছে হাজারও শিশু। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই অঞ্চলটিতে চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরও ১৫ হাজার শিশু জন্ম নেবে। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) এই তথ্য জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা ‘সেইভ দ্য চিলড্রে’। বুধবার তুরস্কের বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি এই খবর প্রকাশ করেছে।
মানবাধিকার সংস্থা সেইভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, জীবনের এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ গাজায় আরও ১৫ হাজার শিশু জন্ম নিতে যাচ্ছে। এসব শিশুদের সকলেই ‘ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে গুরুতর ঝুঁকিতে’ এবং ‘চিকিৎসা সেবা, খাবার পানিসহ খাদ্য সংকটের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেইভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, ‘সন্তান জন্মদানকারীদের মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ নারী গর্ভকালীন বা প্রসবকালীন বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছে।’ জাতিসংঘের সাম্প্রতিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। জাতিসংঘের মতে, অবরুদ্ধ গাজায় প্রতিদিন প্রায় ১৮০ নারী সন্তান প্রসব করেন। যা অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে উচ্চ জন্মের হারের জন্য দায়ী।
ওই বিবৃতিতে গাজায় গর্ভবতী নারীদের দুরাবস্থার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, সেখানে ‘পর্যাপ্ত খাবার পানির সংকট, খাদ্য ও প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাব রয়েছে। গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলারা পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছেন না। এরমধ্যে, তীব্র সংকটের সম্মুখীন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো হামলার শিকার হয়েছে। যা গর্ভবতী মহিলা এবং নবজাতকসহ হাজার হাজার রোগীকে মৃত্যুর মুখে ফেলে দিয়েছে।’
গাজা উপত্যকায় সেভ দ্য চিলড্রেনের কর্মী মাহা শিফা হাসপাতালের বাইরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে তাকে অঞ্চলটির দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে নেয়া হয়। হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের অবস্থা ভয়ঙ্কর ছিল। হলওয়েগুলোতে প্রসূতি নারীরা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। ইনকিউবেটরে অজ্ঞাত নবজাতক শিশু। যার পরিবারের কোনও সদস্যই জীবিত নেই। হাসপাতালে জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে। আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হই। আমি জানি না তারা বেঁচে আছে কিনা।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, গাজার মোট ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে ২২টিই এখন ‘অকার্যকর’।
অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর জেসন লি বলেন, ‘একটি মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে শিশুরা। এ যেন এক দুঃস্বপ্ন। তাদের পরিবারগুলো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। চিকিৎসা সেবা ছাড়াই সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হচ্ছেন গর্ভবতী নারীরা। নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নেয়া শিশুরা ইনকিউবেটরেই মারা যাচ্ছে।’
এসময় জেনারেটরগুলোকে সচল করতে গাজায় জ্বালানী প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোকে হামলা থেকে সুরক্ষিত রাখার দাবি জানান তিনি। জেসন বলেন, ‘এ সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। আমাদের যুদ্ধবিরতি দরকার। এবং তা এখনই দরকার।’
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের আকস্মিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর থেকেই গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে বিমান ও স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ দেওয়া তথ্যানুসারে, এতে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৩২০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যাদের প্রায় ৭ হাজার ৮০০ জনই নারী ও শিশু। আরেএ হামলায় আহত হয়েছে ২৯ হাজার ২০০ জনেরও বেশি।
ইসরায়েলের হামলায় গাজা উপত্যকায় হাসপাতাল মসজিদ ও গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।
সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, এ যুদ্ধে ইসরায়েলে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ জন মারা গেছে
আপনার মতামত লিখুন :