ফাইনালে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য, ‘খালি বলেন কয়টা লাগবে!’


Assroy প্রকাশের সময় : মার্চ ১, ২০২৪, ১২:৫৯ অপরাহ্ন /
ফাইনালে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য, ‘খালি বলেন কয়টা লাগবে!’

আশ্রয় ডেস্ক

লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েও আলফাত টিকিট ম্যানেজ করতে পারেননি। কুমিল্লা থেকে এক সপ্তাহ আগে ঢাকায় বোনের বাড়িতে এসেছেন তিনি। প্লে অফের ম্যাচ দেখার পর অপেক্ষায় ছিলেন ফাইনাল দেখার। কিন্তু লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট না পেয়ে হতাশ হলেও দমে যাননি। আজকে কালোবাজারি থেকে উচ্চমূল্যে টিকিট কিনে গ্যালারিতে গেছেন। শুধু আলফাত নয়, তার মতো হাজারো মানুষ কালোবাজারি থেকে ৩০০ টাকার টিকেট কিনেছেন ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকার মধ্যে। 

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার বিপিএল দশম আসরের ফাইনাল মাঠে গড়াবে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ম্যাচটি শুরু হবে। ম্যাচ ৫/৬ ঘণ্টা আগে থেকেই দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। বিশেষ করে যারা টিকিট পাননি, তাদের আনাগোনাই ছিল বেশি। ফাইনালকে ঘিরে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য ছিল চোখে পড়ার মতো। স্টেডিয়ামের পাঁচটি গেট ঘিরে কালোবাজারিদের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে। 

স্টেডিয়ামে আশপাশে ঘুরে দেখা গেছে উচ্চমূল্যে কালোবাজারিতে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ গ্যালারির সর্বনিম্ন ৩০০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকার মধ্যে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা সাধারণ গ্যালারির টিকিটের। ঠিক এই কারণেই এর দামও খানকিটা বেশি। ক্লাব হাউজের ৮০০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকায়, গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের ২৫০০ টাকার টিকিট সাড়ে তিন থেকে ৫ হাজার টাকায়।

ম্যাচের আগের দিন অনলাইন কিংবা সরাসরি গিয়ে ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকরা টিকিট না পেলেও ম্যাচের দিন কালোবাজারিদের হাতে অগণিত টিকিট। স্টেডিয়ামের এক নম্বর ও দুই নম্বর গেটের মধ্যবর্তী স্থানে কালোবাজারিদের একটি গ্রুপকে সক্রিয় অবস্থায় দেখা গেছে। পরিচয় গোপন করে প্রতিবেদক সাধারণ গ্যালারির ৬টা টিকিট কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে। কালোবাজারি ব্যক্তিটি জানায় ৬টা না, ৬০০ টিকিটও ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। তার কথায়, ‘কয়টা লাগবে খালি বলেন!’ শুধু ওই গ্যালারি নয়, স্টেডিয়ামের ৪ ও ৫ নম্বর গেটের সামনেই কালোবাজারিদের আধিপত্য বেশি দেখা গেছে। 

কিন্তু সবার পক্ষে কালোবাজারিদের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে টিকিট কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এই কারণে একটু কম মূল্যের প্রত্যাশায় দর্শকরা এক গ্যালারি থেকে আরেক গ্যালারিতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন। যদি কোনোভাবে একটি টিকিট ম্যানেজ করা যায়। স্টেডিয়ামের আশপাশে গলায় বিসিবির দেওয়া অ্যাক্রিডেটেশন ঝুলানো কাউকে দেখলেই দৌড়ে যাচ্ছেন টিকিট প্রাপ্তির আশায়। 

পটুয়াখালী থেকে খেলা দেখতে এসেছেন দুই বন্ধু। কিন্তু দুই দিন ঘুরে টিকিটের ব্যবস্থা করতে পারেননি। এখন স্টেডিয়ামে আশপাশে ঘুরছেন। পকেটে খুব বেশি টাকা না থাকায় উচ্চমূল্যের টিকিটও কিনতে পারছেন না। বাংলা ট্রিবিউনকে তারেক ও ফয়সাল জানান, ‘অল্পকিছু টাকা নিয়ে গতকাল সকালে স্টেডিয়ামে টিকিট কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু টিকিট পাইনি। রাতে এলাকার এক ভাইয়ের বাসাতে ছিলাম। আজকে সকাল থেকেই ঘুরছি। কিন্তু ৩০০ টাকার টিকিট ১৫০০ টাকা চাচ্ছে। আমরা ১০০০ টাকা বলেছি। উল্টা আমাদের বলে নিয়ে নেন, একটু পর ২ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে।’
 
বিপিএলের ফাইনালের টিকিট নিয়ে হাহাকার সর্বত্র। টিকিট নামক সোনার হরিণ খোঁজে গত দুই দিন ধরে হন্যে হয়ে ঘুরছেন দর্শকরা। কিন্তু কোথাও টিকিট নেই। ম্যাচের আগের দিন বৃহস্পতিবার টিকিটকে ঘিরে স্টেডিয়ামে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে গেছে। টিকেটের খোঁজে ভোর থেকেই দর্শকরা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে কাউন্টার থেকে তাদের জানানো হয় টিকেট শেষ! এই নিয়ে হট্টগোল হয়ে পুলিশ অ্যাকশনে যেতে বাধ্য হয়, করে লাঠিচার্জ।