আসাদুজ্জামান (আসাদ)
রাজধানী ঢাকার শাহআলী থানাধীন এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জেরে শেখ ওমর ফারুক (৪০) নামের এক মোটর পার্টস ব্যবসায়ীকে গত ২১অক্টোবর ২০২৩ইং তারিখে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চঞ্চলের সৃষ্টি হয়। নড়ে চড়ে বসে শৃঙ্খলা বাহিনী। এলাকার আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে ও আসামীদের দ্রæত গ্রেপ্তার করে বিচারের সম্মুখীন করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো: জসিম উদ্দিন মোল্লা। এই স্পর্শকাতর মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় সদ্য যোগদান করা শাহআলী থানার চৌকোষ পুলিশ অফিসার সাব-ইন্সপেক্টর মো: মশিউর রহমানকে । তদন্ত কর্মকর্তা তার সঙ্গীও ফোর্স নিয়ে দক্ষতার সাথে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অজ্ঞাত ও এজাহার ভুক্ত তিন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ৯.৪০ ঘটিকার দিকে ভিকটিম তার গাবতলীতে অবস্থিত টায়ার ভলকানাইজিং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফেরার পথে বাসার ওদূরেই আগ থেকে ওঁৎ পেতে থাকা এজাহার ভুক্ত আসামী ও অজ্ঞাত আরো কয়েকজন আসামী মিলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ভিকটিম ওমর ফারুক অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন ও ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
এই হত্যাকাÐকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং আইন শৃঙ্খলা অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।পরবর্তীতে ভিকটিমের মা জাহানারা বেগম (৬৬) বাদী হয়ে শাহআলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর-১৮ /২৪৭। ঘটনার পরের দিন সকালবেলা মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো: জসিম উদ্দিন মোল্লা, শাহআলী-দারুস সালাম যোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মফিজুর রহমান পলাশ, শাহআলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে উপ-পুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লা ভিকটিমের পরিবারকে আশ্বস্ত করে বলেন- এই ঘটনায় যে বা যারা জড়িত থাকুক না কেন, অতি দ্রæত সকলকে গ্রেপ্তার করে আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানো হবে।
স্পর্শকাতর এই হত্যা মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় শাহআলী থানায় সদ্য যোগদান করা অত্যন্ত দক্ষ পুলিশ অফিসার সব-ইন্সপেক্টর মো: মশিউর রহমানকে। তদন্তকারী কর্মকর্তা তার সঙ্গীও ফোর্স ও অন্যান্য পুলিশ অফিসারদের সহযোগিতায় অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে অজ্ঞাত ও এজাহার ভুক্ত মোট তিন আসামী মো: মেহেদী হাসান রাহাত, মো: সৌরভ (২৮) ও মো: আবু হানিফ রনি (২৬) কে গ্রেপ্তার করে নজির স্থাপন করেন এবং মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের দৃঢ় প্রত্যয়ের আস্থা রাখেন।
এতো দ্রæত সময়ে আসমীদের গ্রেপ্তার করার কৌশল সম্পর্কে সাব-ইন্সপেক্টর মশিউর রহমানের সাথে কথা হলে, তিনি প্রতিবেদককে বলেন , আমি শাহআলী থানায় সদ্য যোগদান করেছি।তথাপিও, অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর মামলাটির তদন্তভার আমাকে দিয়ে আমার উপর আস্থা রাখার জন্য মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো: জসিম উদ্দিন মোল্লা স্যার, শাহআলী-দারুস সালাম যোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মফিজুর রহমান পলাশ স্যার ও শাহআলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আমিনুল ইসলাম স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমি মনে করি, আল্লাহর উপর ভরসা করে লক্ষ্যকে স্থির রেখে কঠোর পরিশ্রম করলে অবশ্যই সফলতা পাওয়া যায়। যার প্রমাণ অত্যন্ত দ্রæততার সাথে এই মামলার আসামীদের গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া। আমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আমিনুল ইসলাম স্যারের দিক-নির্দেশনায়, পরিদর্শক (অপারেশন) মো: হাবিবুর রহমান স্যারের পরামর্শে, থানার অন্যান্য সহকর্মী পুলিশ অফিসারদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়, আমার সঙ্গীও পুলিশ সদস্য ভাইদের নিরলস প্রচেষ্টা ও কর্ম দক্ষতায় এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারে আমি উল্লেখিত আসামিদের দ্রæত গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। বাকি আসামিদের অতি দ্রæত গ্রেপ্তার করার চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং আশা করছি খুব শীঘ্রই বাকিদেরও গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।
এছাড়া শাহআলী থানা পুলিশের সহকারি পরিদর্শক মো: মশিউর রহমান সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায় -তিনি ঝালকাঠি জেলার ও দেশের শতভাগ শিক্ষার হার অর্জন করা উপজেলা রাজাপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। মৃত তোফাজ্জল হোসেন ও মৃত লুৎফুন নাহার দম্পতির সাত ছেলে-মেয়ের মধ্যে ষষ্ঠ ডান-পিঠে মশিউর রহমান ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন পুলিশে চাকরি করে দেশের মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করবেন। স্বপ্নের পথ পাড়ি দিয়ে ১৯৯৬ সালে তিনি পুলিশে যোগদান করেন। যথাযথ ট্রেনিং শেষ করে তিনি প্রথমে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর মডেল থানায় যোগদান করেন। পরবর্তীতে, শাহালী থানা, পরবর্তীতে রেপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, এরপরে উত্তরা পশ্চিম থানা এবং তুরাগ থানায় দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন শেষে পুনরায় অতি সম্প্রতি শাহআলী থানায় আবারো যোগদান করেন। খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়,রেপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানসহ বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন কালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি অস্ত্র উদ্ধার, জঙ্গি দমন, মাদক উদ্ধার, চাঁদাবাজ নির্মূল, অপহরণ, গুম, হত্যা মামলার মত চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর মামলা ন্যায়-নিষ্ঠতা ও দক্ষতার সাথে তদন্ত করেন এবং আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের মুখোমুখি দাঁড় করাতে ব্যাপকভাবে সফল হন।
আপনার মতামত লিখুন :