সংসদ সদস্য প্রার্থীর যোগ্যতা ও অযোগ্যতা


Assroy প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৬, ২০২৩, ৭:৫৯ পূর্বাহ্ন /
সংসদ সদস্য প্রার্থীর যোগ্যতা ও অযোগ্যতা

আশ্রয় ডেস্ক

বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। ওই পরিবর্তে নির্বাচনের বিস্তারিত তফসিল ঘোষণার পাশাপাশি সংসদ সদস্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টিকে ব্যাপকভাবে প্রচারের লক্ষ্যে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সংসদ সদস্য প্রার্থীর যোগ্যতা ও অযোগ্যতার ক্ষেত্রে সংবিধানের বিধান এবং গণপতি নিযুক্ত আদেশের বিধানগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এর অনেকগুলো বিষয়ে স্পষ্টীকরণের জন্য ব্যাখ্যাও তুলে দেওয়া হয়েছে।

এতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মেয়র ও চেয়ারম্যানদের প্রার্থী হওয়া: উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান এবং সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মেয়রের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত অফিস/প্রতিষ্ঠানের বা করপোরেশন অথবা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, কর্তৃপক্ষ এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলোয় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য পদ্ধতিগতভাবে পদত্যাগ করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা ও অযোগ্যতা-সংক্রান্ত বিধান
সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিক ও ২৫ বছর বয়স হলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন। তবে আদালতে অপ্রকৃতিস্থ ও দেউলিয়া হলে; বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন বা আনুগত্য স্বীকার করলে; নৈতিক স্খলনজনিত কোনও ফৌজদারি অপরাধে দুই বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে; ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন কোনও অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে; প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনও লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত হলে অথবা অন্য কোনও আইনে নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হলে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
প্রার্থীকে বাংলাদেশের যেকোনও নির্বাচনি এলাকায় ভোটার হতে হবে।

দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যাবে না। তবে বিদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করে এলে নির্বাচনে অযোগ্য হবেন না।

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর ক্ষেত্রে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলে গণ্য হবে না।

প্রজাতন্ত্রের কর্ম বলতে অসামরিক বা সামরিক ক্ষমতায় বাংলাদেশ সরকার-সংক্রান্ত কর্ম, চাকরি বা পদ এবং সরকারের সংবিধিবদ্ধ যেকোনও কর্তৃপক্ষ, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বোঝাবে।

কোনও ব্যক্তি দেশের কোনও নির্বাচনি এলাকায় ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত না হলে; কোনও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত না হলে বা একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী না হলে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হবেন না।

প্রজাতন্ত্র বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের চাকরি থেকে পদত্যাগ বা অবসর, অবসরের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে এবং বিদেশি রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের অনুদানে পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার কার্যনির্বাহী পদ থেকে পদত্যাগ বা অবসর বা পদচ্যুতির ক্ষেত্রে তিন বছর ও দুর্নীতির কারণে চাকরিচ্যুত বা বাধ্যতামূলক অবসরের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর অতিক্রম না হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন ন।

কোনও সমবায় সমিতি এবং সরকারের কাছে পণ্য সরবরাহ করতে বা সরকারের কোনও চুক্তির বাস্তবায়ন বা সেবা কার্যক্রমে নিজ নামে বা ট্রাস্টি হিসেবে কোনও ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের নামে বা তার সুবিধার্থে বা তার উপলক্ষে বা কোনও হিন্দু যৌথ পরিবারের সদস্য হিসেবে তার কোনও অংশ বা স্বার্থ রয়েছে, এ ধরনের চুক্তিতে আবদ্ধ হলে; ব্যক্তি এককভাবে বা কোনও কোম্পানির পরিচালক/অংশীদার হিসেবে ক্ষুদ্র কৃষিঋণ ছাড়া ঋণগ্রহীতা হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের আগে ঋণ বা তার কোনও কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে; টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বা সরকারের সেবা প্রদানকারী কোনও সংস্থার অন্য কোনও বিল মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের আগে পরিশোধে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। দি ইন্টারনাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ (অ্যাক্ট নম্বর. ১৯ অব ১৯৭৩)-এর অধীন কোনও অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হলেও নির্বাচন করতে পারবে না।

মনোনয়নপত্র জমার ক্ষেত্রে যা যা করতে হবে
নির্ধারিত ফরমে প্রস্তাবকারী সমর্থনকারী স্বাক্ষরিত মনোনয়ন প্রস্তাব পৃথক মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করতে হবে। মনোনয়নে সম্মতি প্রদান করেছেন এবং তার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার বা সদস্য থাকার কোনও অযোগ্যতা নেই মর্মে ঘোষণা দিতে হবে।

কোনও প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী অন্য কোনও মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারী স্বাক্ষর করেননি বলে ঘোষণা দিতে হবে।

প্রার্থী তিনটির বেশি নির্বাচনি এলাকার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি বলে ঘোষণা দিতে হবে।

মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যেসব দলিল সংযুক্ত করতে হবে
স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে, নির্বাচনি এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন সংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা (তবে কোনও স্বতন্ত্র প্রার্থী আগে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে এর দরকার হবে না)।

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারীর স্বাক্ষরিত মনোনয়নের প্রমাণিক (নিবন্ধিত দল প্রাথমিকভাবে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে পারবে)।

প্রার্থীর স্বাক্ষরিত একটি হলফনামা, যেখানে অর্জিত সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের সত্যায়িত অনুলিপি, বর্তমানে তিনি কোনও ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত আছেন কি না।

অতীতে তার বিরুদ্ধে করা কোনও ফৌজদারি মামলার থাকলে তার রায়, ব্যবসা বা পেশার বিবরণী।

আয়ের উৎসগুলো, নিজের বা নির্ভরশীলদের পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী, অতীতে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলে ভোটারদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি কতগুলো পূরণ হয়েছে তার তথ্য, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে একক বা যৌথভাবে বা নির্ভরশীলদের নামে ঋণ থাকলে তার তথ্য, রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র যুক্ত করতে হবে।

কোনও ব্যক্তি একই নির্বাচনি এলাকার জন্য একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বৈধ হিসেবে প্রাপ্ত একটি মনোনয়নপত্র বাদে অন্যগুলো বাতিল হয়ে যাবে।

মনোনয়নপত্র রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার উভয়ের কাছে দাখিল করা যাবে।