ব্যান্ড মিউজিকে ভারত পিছিয়ে কেন?


Assroy প্রকাশের সময় : নভেম্বর ৮, ২০২৩, ৩:৩০ অপরাহ্ন /
ব্যান্ড মিউজিকে ভারত পিছিয়ে কেন?

সংগীতের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করলে উপমহাদেশে ভারতের অবস্থান নিঃসন্দেহে শীর্ষে। শাস্ত্রীয় থেকে আধুনিক, যুগ যুগ ধরেই এখানে সব ঘরানার গান হয়ে আসছে। বিশেষ করে সিনেমার গানে দেশটির সাফল্য বিশ্বের যে কোনও দেশের চেয়ে এগিয়ে। একইভাবে ব্যান্ড মিউজিকে বিশ্বের বহু দেশ থেকে বেশ পিছিয়ে আছে ভারত। এমনকি সীমান্তছোঁয়া দেশ বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকেও পিছিয়ে আছে শতকোটি মানুষের দেশটি।

কিন্তু বিশাল এই দেশে ব্যান্ড মিউজিকের চিত্রটা কেন এমন ফিকে। হাতে গোনা কিছু ব্যান্ড জনপ্রিয় হয়েছে বটে। তবে বৃহৎ পরিসরে ব্যান্ড সংস্কৃতিটা গড়ে ওঠেনি দেশটিতে। ভারতের বিভিন্ন কনসার্টের দিকে তাকালেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যায়। এসব আয়োজনে বরাবরই প্লেব্যাক গায়ক-গায়িকাদের আধিপত্য। তাহলে কি ব্যান্ড মিউজিক ভারতে অবহেলিত? কিংবা ব্যান্ড কালচারে ভারত কি পিছিয়ে আছে? 

এর উত্তর খোঁজার আগে ভারতে ব্যান্ড মিউজিকের শুরুর প্রেক্ষাপটটা জানা যাক। ষাটের দশকেই দেশটিতে রক মিউজিকের আগমন ঘটে। তখন পশ্চিমা সংগীতের সঙ্গে ভারতীয় সংগীতের মিশ্রণে একটা ফিউশন চালু হয়। ওই সময়ে ‘থান্ডারবার্ডস’, ‘মিস্টিকস’, ‘বিট-এক্স’, ‘ফ্লিনস্টোন’ ইত্যাদি ব্যান্ড গড়ে উঠেছিল।

কিন্তু সত্তরের দশকে ভারতে সিনেমার গান তুমুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। ফলে ব্যান্ড মিউজিক সেভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেনি। ভারত তথা উপমহাদেশের অন্যতম কালজয়ী ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। যেটা ১৯৭৬ সালে সেখানে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে ব্যান্ডটি সাফল্যের দেখা পায়নি। বরং নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে ব্যান্ডটির গানগুলো মানুষের মাঝে ছড়াতে শুরু করে।

আঞ্চলিকতার বাইরে ভারতের প্রথম রক ব্যান্ড ‘রক মেশিন’। ১৯৮৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং চার বছর পর তাদের প্রথম অ্যালবাম ‘রক অ্যান্ড রোল রেনেগেড’ প্রকাশ হয়। ১৯৯৩ সালে অবশ্য ব্যান্ডটি নাম পাল্টে ‘ইন্দুস ক্রিড’ হয়ে যায়।

আশির দশকের শেষ এবং নব্বই দশকে ভারতে বেশ কিছু ব্যান্ড আত্মপ্রকাশ করে। এর মধ্যে রয়েছে ‘ইউফোরিয়া’, ‘ইন্ডিয়ান ওশান’, ‘পরিক্রমা’, ‘পেন্টাগ্রাম’, ‘বম্বে ভাইকিংস’, ‘ক্যাকটাস’, ‘সিল্ক রুট’ ইত্যাদি। কিন্তু সিনেমার গানকে ছাপিয়ে শ্রোতামহলে এসব ব্যান্ড খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। তাছাড়া এসব ব্যান্ডের গান-মিউজিকে রক, মেটালের উপস্থিতিও উল্লেখযোগ্য নয়।

ভারতের পরিধি ও মিউজিক ইতিহাসের তুলনায় ব্যান্ড মিউজিক যে অনেকটাই পিছিয়ে, তা প্রশ্নাতীত। এবং পেছনের অন্যতম কারণ দেশটির সংগীত ঘুরপাক খেয়ে আসছে সিনেমার মধ্যে। বিশেষকরে ভারতের মিউজিকে বরাবরই প্রভাব বিস্তার করে আসছে বলিউড। যদিও এটা মানতে নারাজ গায়ক ও সংগীত পরিচালক বিশাল দাদলানি। তিনি ‘পেন্টাগ্রাম’ ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ভারতের ব্যান্ড মিউজিক নিয়ে তিনি একবার বলেছিলেন, ‘এখানে ব্যান্ড কালচারের ঘাটতি নেই। আপনি যদি শিলং, কলকাতা কিংবা বেঙ্গালুরুতে যান, সেখানে ভারতের সেরা কিছু ব্যান্ডের দেখা পাবেন। হ্যাঁ, যদিও এটা একটা স্বনির্ভর জায়গায় আসেনি, তবে গত কয়েক বছরে কিছু পরিবর্তন আসছে।’

যদিও বিশাল নিজেই নিজের ব্যান্ড কার্যক্রম ছাপিয়ে সিনেমার গান আর রিয়েলিটি শোতে বেশি সময় দিয়েছেন, দিচ্ছেন; এমনকি সাফল্যও পেয়েছেন। তবু তিনি মনে করেন, ‘এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। আর ব্যান্ড মিউজিকে একজন আর্টিস্টের নিজস্বতা খুঁজে পাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি কয়েক বছর পর চিত্রটা একদম অন্যরকম হবে।’

না। তেমন কোনও লক্ষণ এখনও পরিলক্ষিত নয়। বরং বাংলাদেশের রকস্টার জেমসকে নিয়ে বলিউডের প্রীতম একটি আন্তর্জাতিক ব্যান্ড গড়ে তোলার কথা বলেও ব্যর্থ হয়েছেন।

এছাড়া ২০০৫ সালে ‘কৈলাশা’ নামের একটি ব্যান্ড গঠন করেন কৈলাশ খের। এই ব্যান্ডের হয়ে পাঁচটি অ্যালবাম প্রকাশ করেন তিনি। এর মধ্যে ‘তেরি দিওয়ানি’, ‘সাইয়া’ গানগুলো দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে বটে। কিন্তু সেটা কেবল কৈলাশ খেরকেই পরিচিতি দিয়েছে। সুযোগ করে দিয়েছে বলিউডে গাইবার। বিপরীতে তার ব্যান্ডটি রয়ে গেছে আড়ালেই।

শুরু থেকে এখনও বলার মতো ব্যান্ড কালচার রয়েছে কেবল ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ ছাড়াও ‘ফসিলস’, ‘চন্দ্রবিন্দু’, ‘ফকিরা’, ‘ক্যাকটাস’, ‘লক্ষ্মীছাড়া’সহ বহু ব্যান্ড রয়েছে, যেগুলো প্রায় নিয়মিত কনসার্ট করে। তবে বাংলাদেশের তুলনায় তাও নগণ্যই বলা চলে। তাই নয়, বরাবরই কলকাতার ব্যান্ডগুলোকে ছাপিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এখনও তুমুল জনপ্রিয় বাংলাদেশের এলআরবি, মাইলস, ফিডব্যাক আর নগর বাউলের গান।