বিনোদন রিপোর্ট
বেশি না, দু’বছর পেছন থেকে শুরু করা যাক। ২০২১ সালের নভেম্বরে একটি ভিডিও বার্তায় শাফিন আহমেদ জানান, তিনি মাইলস থেকে আলাদা হয়ে গেছেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ব্যান্ডের সব কার্যক্রম বন্ধের দাবিও করেন তিনি। বিপরীত বক্তব্য আসে ‘মাইলস’র অন্য সদস্য তারই বড় ভাই হামিন আহমেদের কাছ থেকে।
পারস্পরিক মতানৈক্য, মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত জটিলতা থেকেই মূলত দুই ভাইয়ের এসব কাণ্ড। যেটা আইনের দুয়ার অব্দি গড়িয়েছে। এসব নিয়ে সেই সময় বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। তবে কিছু দিন পর দেখা যায়, শাফিন ছাড়াই বাকি সদস্যরা মিলে ‘মাইলস’ পরিচালনা করছেন, কনসার্টেও গাইছেন। আবার শাফিন আহমেদ নিজের মতো করে একটি দল গঠন করে কনসার্টে নেমেছেন।
এভাবেই চলছিল। কিন্তু সোমবার (৪ ডিসেম্বর) প্রায় মধ্যরাতে ফেসবুক পেজে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন শাফিন আহমেদ। জানান, বিভিন্ন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম থেকে আসা ‘মাইলস’র আয়ের কোনও অংশই তাকে দেওয়া হয়নি।
সূত্রটা স্পটিফাই। বছরের শেষ প্রান্তে এসে বিশ্বের জনপ্রিয় এই মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম শিল্পীদের গান-অ্যালবামের জনপ্রিয়তার সার্বিক চিত্র তুলে ধরেছে। বাদ যায়নি ‘মাইলস’ও। স্পটিফাই-এর রিপোর্ট অনুসারে, চলতি বছর প্ল্যাটফর্মটিতে ১৪৪টি দেশ থেকে তাদের গান ২ মিলিয়ন বার বেজেছে। সেই রিপোর্ট ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে আনন্দের সঙ্গে শেয়ার করা হয়, যার নেতৃত্বে হামিন আহমেদ।
আর ওই পোস্টের স্ক্রিনশট দিয়েই নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন ছোটভাই দলছুট শাফিন আহমেদ। বললেন, “এরা স্পটিফাই ও অন্যান্য স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে ‘মাইলস’র সকল গান দিয়ে আসছে ২০১৫ সাল থেকে, কায়নেটিকের (এজেন্সি) মাধ্যমে। এক পয়সা রয়্যালটি এখনও আমার হাতে আসেনি। অতি সম্প্রতি আমার সুর করা গানগুলি সরিয়ে রাখা হয়েছে, আমি প্রতিবাদ করছি সেই ভয়ে। খেয়াল করে দেখেন, গ্রুপ ছবি থেকে আমাকে কেটে বাদ রাখা হয়েছে; কিন্তু আমার গাওয়া গানগুলো বাজছে ঠিকই। এই কর্মকাণ্ড আবার গর্বের সাথে প্রচার করা হচ্ছে। আইনের কথা বাদই দিলাম। নৈতিকতা কতখানি বিসর্জন দিলে এরকম কাজ করা সম্ভব, ভেবে দেখেন।”
শাফিনের এমন বক্তব্যের সূত্র ধরেই মূলত দুই ভাইয়ের ‘হাতাহাতি’ শুরু হয় অন্তর্জালে।
ছোট ভাইয়ের এমন পাবলিক পোস্ট দেখে চুপ থাকতে পারেননি ‘মাইলস’র বড় ভাই হামিন আহমেদ। শাফিন আহমেদের পোস্টের নিচে এসেই কড়া জবাব দেন হামিন। শাফিনকে উদ্দেশ্য করে হামিন বলেন, “আপনি এখানে সবাইকে বলেন না কেন যে, আজ পর্যন্ত আপনি ‘মাইলস’ থেকে কতো রয়্যালটি পেয়েছেন এবং ‘মাইলস’ আপনার থেকে কত টাকা পায়? আপনি বেআইনিভাবে কোনও অনুমতি ছাড়াই ‘মাইলস’র হিট গানগুলো (ফিরিয়ে দাও, নীলা, চাঁদ তারা, জ্বালা জ্বালা, ধিকি ধিকি, পিয়াসী মন) পারফর্ম করে যাচ্ছেন, যেগুলোর কোনোটারই আপনি প্রণেতা নন। অর্থাৎ অবৈধ ব্যাবহার, যা কিনা বাংলাদেশ কপিরাইট আইনে ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’! আপনি নিজের গান দিয়ে শো করেন না কেন? কেন মানাম আহমেদ ও হামিন আহমেদের গান গাইতে হয়? আর জুনিয়র কয়েকজন মিউজিশিয়ানকে দিয়ে হামিন ও মানামের গিটার অ্যান্ড কিবোর্ড সলো হুবহু নকল বাজিয়ে নিচ্ছেন! কে আপনাকে এই অধিকার দিয়েছে? আপনি আবার নৈতিকতার কথা বলেন!”
দীর্ঘ সেই মন্তব্যে হামিন আহমেদ আরও বলেন, “কেন আপনি এখানে সবাইকে বলেন না যে, রয়্যালটির সম্পূর্ণ অ্যাকাউন্টটি আপনার হাতে দেওয়া আছে এবং কপিরাইট বোর্ড ও পিবিআই-এর হাতে রয়েছে। যেখানে এটি পরিষ্কার যে, আপনি আপনার নিজের সিদ্ধান্তে এবং তৃতীয়বারের মতো ‘মাইলস’ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে ‘মাইলস’র কাছে যা পান, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি ব্যান্ড আপনার থেকে পায়। কেন বলেন না যে, পুলিশ রিপোর্টে বলা আছে, আপনার অভিযোগের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি!”
হামিনের মতে, এত দিন সম্মান রক্ষা ও ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলেননি। তবে এবার এসব বন্ধ হওয়া জরুরি। এছাড়া ‘মাইলস’র পাওনাগুলোও অবিলম্বে পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন তিনি। আর সবশেষে যে অভিযোগটি করেছেন, তা শাফিন আহমেদের মতো কালজয়ী ব্যান্ড তারকার ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিতই বটে! হামিনের ভাষ্যেই শোনা যাক, “মাইলস’র ডায়ানা অডিও স্টুডিও মনিটর স্পিকার ফিরিয়ে দিন, যা আপনি কাউকে না জানিয়েই নিয়ে গেছেন এবং যথেচ্ছা অবৈধ ব্যবহার করছেন!”
যদিও এই প্রতিবেদন লেখার সময় শাফিনের আহমেদের ওই পোস্টে হামিন আহমেদের এই দীর্ঘ মন্তব্যটি আর দেখা যাচ্ছে না। অনুমান করা যায়, দুজনের যে কেউ সেটি মুছে ফেলেছেন। তবে এর আগেই দুই ভাইয়ের ‘হাতাহাতি’র স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়েছে অন্তর্জালে। আর অধিকাংশ শ্রোতা-ভক্তের মনেই আক্ষেপ, পছন্দের ব্যান্ডের সদস্যদের মধ্যে এমন কাদা ছোড়াছুড়িও দেখা লাগছে! তাও আবার যাদের জন্ম সংগীত কিংবদন্তি দম্পতি কমল দাশগুপ্ত ও ফিরোজা বেগমের ঘরে।
উল্লেখ্য, ‘মাইলস’ গঠিত হয় ১৯৭৯ সালে। প্রথম দিকে তারা মূলত ইংরেজি গানই করতো। ১৯৮২ সালে তাদের প্রথম অ্যালবাম ‘মাইলস’ (ইংরেজি) বের হয়। বাংলা গানে তাদের অভিষেক ১৯৯১ সালে ‘প্রতিশ্রুতি’ অ্যালবামের মাধ্যমে। এর পর থেকেই ব্যান্ডটি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমানে ব্যান্ডটির লাইনআপে রয়েছেন হামিন আহমেদ, মানাম আহমেদ, সৈয়দ জিয়াউর রহমান তুর্য ও ইকবাল আসিফ জুয়েল।
আপনার মতামত লিখুন :