১৯৭১ সালে যশোরের চৌগাছা উপজেলার গরিবপুরে সংঘটিত অবিস্মরণীয় যুদ্ধের বীরত্বগাঁথা নিয়ে বলিউডে তৈরি হলো একটি অ্যাকশন থ্রিলার। এর নাম ‘পিপ্পা’। কেন? সেই উত্তর জানতে হলে ইতিহাসের পাতায় চোখ বোলাতে হবে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসা ভারতীয় মিত্রবাহিনীর বহরে ছিল যুদ্ধ ট্যাংক পিটি-৭৬। এটি উভচর ট্যাংক, অর্থাৎ ডাঙায় চলাচলের পাশাপাশি জলেও ভাসতো। গরিবপুরে এমন কয়েকটি ট্যাংকের কারণেই পাকিস্তানি সেনাদের শোচনীয় পরাজয় হয়। পিটি-৭৬ ট্যাংককে ভারতীয় সেনারা ‘পিপ্পা’ নামে ডাকতেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল গরিবপুরের যুদ্ধ। এটি ‘ব্যাটল অব গরিবপুর’ নামে পরিচিত। ভারতের বিভিন্ন সামরিক কলেজে এই অভাবনীয় সাফল্যের ইতিহাস পড়ানো হয়। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর রণাঙ্গনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে অংশ নেয় ভারতীয় মিত্রবাহিনী। এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে প্রথমবারের মতো ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। যদিও ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর।
১৯৭১ সালে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ৪৫ ক্যাভালরির স্কোয়াড্রনের নির্ভীক সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন ক্যাপ্টেন বলরাম সিং মেহতা। তিনি ‘দ্য বার্নিং শ্যাফিস’ গ্রন্থে গরিবপুরের যুদ্ধে জয়ী হওয়ার ঘটনা বিশদভাবে লিখেছেন। ১৪ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট সেনাদের সঙ্গে নিয়ে ১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর রাতের আঁধারে কাবাডাক নদী পেরিয়ে ঘন কুয়াশার আড়ালে গরিবপুরের সীমানায় ঢুকে পড়েন তারা। ২১ নভেম্বর ভোরের আলো ফুটতেই ভারতীয় মিত্রবাহিনী নিজেদের সর্বস্ব ঢেলে মুখোমুখি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরুতেই পাকিস্তানিদের গোলায় প্রাণ হারান ৪৫ ক্যাভালরি স্কোয়াড্রনের কমান্ডার মেজর দলজিৎ সিং নারাং।
‘পিপ্পা’ চলচ্চিত্রের দৃশ্য তখন যুদ্ধ পরিচালনার ভার এসে পড়ে তরুণ বলরাম সিং মেহতার কাঁধে। তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সামনে থেকে লড়ে বীরত্ব ও সাহসিকতার অনন্য নজির গড়েন। তার মুখে ছিলো রণহুঙ্কার– আমরা বীরের মতো লড়ি, বীরের মতো মারি এবং বীরের মতোই মরবো। গরিবপুরের যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ১৪টি এম-২৪ লাইট মার্কিন শ্যাফে ট্যাংক ও ২টি স্যাবর এফ৮৬ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। অন্যদিকে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ৫টি পিটি-৭৬ ট্যাংক বিধ্বস্ত হয়। রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর মোট ১৯ জন শহীদ হন এবং ৩৩ জন আহত হন। পাকিস্তানি বাহিনীর শতাধিক সেনা হতাহত হয়।
বীরযোদ্ধা বলরাম সিং মেহতার চোখ দিয়ে দেশপ্রেম, বীরত্ব ও আত্মত্যাগের গল্প বলা হয়েছে ‘পিপ্পা’য়। এতে ক্যাপ্টেন বলরাম সিং মেহতা চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইশান খাট্টার। করণ জোহরের ‘ধাড়াক’ (২০১৭) সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয় তার। এর আগে ইরানের মাজিদ মাজিদির পরিচালনায় ‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস’-এ দেখা গেছে তাকে। ২৮ বছর বয়সী এই তারকা অভিনেতা শহিদ কাপুরের সৎ ভাই।
বলরাম মেহতার প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ম্রুনাল ঠাকুর। মেয়েটি পেশায় সাংবাদিক। এছাড়া দেখা যাবে প্রিয়াংশু পেনিয়ুলি এবং সোনি রাজদানকে। ছবিটির সংগীত পরিচালনা করেছেন অস্কারজয়ী এ. আর. রাহমান।
ম্রুনাল ঠাকুর ‘পিপ্পা’ পরিচালনা করেছেন রাজা কৃষ্ণা মেনন। তন্ময় মোহন ও রবিন্দর রানধাওয়ার সঙ্গে মিলে চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনিই। এর আগে অক্ষয় কুমারের ‘এয়ারলিফট’ (২০১৬) ও সাইফ আলি খানের ‘শেফ’ (২০১৭) পরিচালনা করে প্রশংসা জুটেছে তার।
রাজা কৃষ্ণা মেনন মনে করেন, যুদ্ধে বিজয়ের এমন অনুপ্রেরণামূলক গল্প বিশ্বের সামনে তুলে ধরা দরকার। তিনি আশা করছেন, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওর মাধ্যমে ‘পিপ্পা’ সারাবিশ্বের দর্শকদের গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সিনেমা ‘পিপ্পা’ যৌথভাবে প্রযোজনা করেছেন রনি স্ক্রুভালা (আরএসভিপি) ও সিদ্ধার্থ রয় কাপুর (রয় কাপুর ফিল্মস)। তাদের বিশ্বাস, ছবিটি নতুন প্রজন্মকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করবে।
‘পিপ্পা’র ট্রেলারে গরিবপুরের যুদ্ধের একঝলক দেখা গেছে। আগামী ১০ নভেম্বর সরাসরি অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে এটি মুক্তি পাবে। যার মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৪০টি দেশের দর্শকরা দেখতে পারবেন এই ছবি।
আপনার মতামত লিখুন :