আশ্রয় ডেস্ক
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, এই নির্বাচন সরকারের জন্য, আওয়ামী লীগের জন্য কোনও নির্বাচন নয়—এটা তাদের নির্বাসনে পাঠাবে, অপেক্ষা করেন। তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করেছে না বিরোধী দল ভাঙতে, নতুন নতুন দল করতে। খেয়াল করে দেখেন, পাকিস্তান আমলে পর্যন্ত রাজাকার পাওয়া গেছে। এবার তো রাজাকারও পাওয়া যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ এবার রাজাকার-আলবদরও পায় না। নতুন নতুন প্রার্থী দেবে, তাও পায় না। খালি আওয়ামী লীগ আছে, আর কেউ নেই।’
রবিবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে একতরফা নির্বাচনের প্রতিবাদে অবরোধের পক্ষে মিছিল শেষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে মাহমুদুর রহমান মান্না সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘চিল যেমন মুরগির বাচ্চা ধরে নিয়ে যায়, এমন করে বিএনপির নেতাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছেন, বিচার করছেন, রাত-দিন করে কারও নামে দুই বছর, কারও নামে আড়াই বছর, কারও নামে তিন বছর সাজা দিয়ে দিচ্ছেন। মামলা চালুই হয়নি, সাজা নির্ধারিত। দুই হাত কাটা মানুষের নামে সন্ত্রাসের মামলা, মৃত মানুষের নামে ফৌজদারি সাজা। আর ওনারা (সরকার) বলছেন, নির্বাচনের চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে।’
নির্বাচন ঠেকে গেছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘ওরা বিভিন্ন সময় বলে—বিরোধী দল নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়, এই নির্বাচন ঠেকাতে পারবে? আমি বলি, নির্বাচন ঠেকে গেছে। নির্বাচন কি হচ্ছে? যারাই যা করেন পার পাবেন না। ওদের নির্বাচনই নেই, ঠেকাবো কী? জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছেন নির্বাচন। বিশ্ববাসী প্রত্যাখ্যান করেছে এই নির্বাচন।’
এজেন্সির টাকা খেয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের নামে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে অভিযোগ করে মান্না বলেন, ‘আমরা রাজনীতির চামচিকা নই। আমরা রাজনীতির কিং। আমরা লড়াই করেছি জনগণের জন্য। লড়াই চলছে, লড়াই চলবে। থামবে না।’
সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলবে। আমাদের আন্দোলনকে বিজয় পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। এখানে পরাজয়ের কোনও সুযোগ নেই, পরাজয় মানে মৃত্যু।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক-এগারোর সরকার বিভিন্ন দল থেকে লোক ভাগিয়ে এনে কিংস পার্টি বানিয়েছে। আর এখন শেখ হাসিনা গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে বিভিন্ন দল থেকে লোক ভাগিয়ে এনে কিংস পার্টি বানাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ফোর ডিভিশন দলের সঙ্গে খেলতে গিয়ে এখন নিজেরাও ফোর ডিভিশন হয়ে গেছে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘‘সকাল বেলা প্রধানমন্ত্রী একটা বক্তৃতা করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘বিরোধীদের আমরা কোনও প্রকার বাধা প্রদান করছি না।’ এই কথাটা কি সত্য? এটা কি তথ্যভিত্তিক? তিনি যখন এই ভাষণ দেন, তখন বিএনপির ১৪ হাজার নেতাকর্মী জেলখানায়। এখন বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ক্ষেতে রাতযাপন করে সকাল বেলা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে যুক্ত হচ্ছেন। দুই দিন আগে তারা (সরকার) একজনকে নাশকতার জন্য জেলে পাঠিয়েছেন, তার দুই হাত নেই। যার দুই হাত নেই সে নাকি নাশকতা করেছে, বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে। এই হচ্ছে নমুনা।’’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান বিরোধী দলের অফিস এখনও তালাবদ্ধ করে রেখেছে। দেশে নাকি নির্বাচনের উৎসব চলছে। তারা মানুষের ভোটের অধিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আজকে খেলায় যুক্ত হয়েছে। ৭০ শতাংশ মানুষ নাকি আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন। তাহলে কেন ১৫ বছর পরে একটা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছেন? কেন মানুষের ভোটের অধিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন? এ রকম করার কারণটা কী? কারণ হচ্ছে, ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের অবস্থা যে রকম হয়েছিল, ২০২৪ সালে এসে আওয়ামী লীগের অবস্থাও সে রকম হবে। এই ভয়তেই তিনি এমন অনৈতিক নির্বাচন করছেন।’
এ সময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুমসহ গণতন্ত্র মঞ্চের আওতাধীন বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :