আবাসিকের পর বাণিজ্যিক এলাকায় মেট্রোরেল, উচ্ছ্বসিত নগরবাসী


Assroy প্রকাশের সময় : নভেম্বর ৪, ২০২৩, ১২:৪১ অপরাহ্ন /
আবাসিকের পর বাণিজ্যিক এলাকায় মেট্রোরেল, উচ্ছ্বসিত নগরবাসী

ঢাকাবাসীর কাছে মেট্রোরেল এখন আর নতুন কিছু নয়। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও অংশ উদ্বোধনের পর থেকেই যানজটের এই শহরে মেট্রোরেল দেখিয়ে দিয়েছে, কতটা স্বস্তি ও নির্বিঘ্নে যাতায়াত করা যায়। তবে এর পূর্ণ সুবিধা পেতে নগরবাসীকে অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও ১০ মাস।

শনিবার (৪ নভেম্বর) উদ্বোধন হয়েছে মেট্রোরেল আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ। এর ফলে এতদিন অনেকটা আবাসিক এলাকাগুলো দিয়ে মেট্রোরেল চলাচল করলেও, এবার তা বাণিজ্যিক এলাকায় প্রবেশ করবে। এতে কর্মব্যস্ত মানুষদের কাজে বাড়বে গতি, বাঁচবে সময়, কষ্ট লাগব হয়ে জীবনে আসবে স্বস্তি বলে জানান রাজধানীবাসী।

উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বলা চলে আবাসিক এলাকা। ঢাকায় বসবাস করা মানুষের একাংশ এর মধ্যবর্তী এলাকাগুলোতে বসবাস করে। অন্যদিকে ফার্মগেটের পর থেকেই ঢাকার মূল বাণিজ্যিক এলাকা শুরু। আদালত, সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, মার্কেট সব কিছু মতিঝিল ও তার আশপাশের এলাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এছাড়া ঢাকা ছেড়ে যেতেও নিয়মিত এই পথ ব্যবহার করতে হয়।

তবে এতদিন এই পথ পাড়ি দিতে হয়েছে গণপরিবহনে নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে। এতে সময় নষ্ট হওয়াসহ শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন রাজধানীবাসী। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ায় স্বস্তির বাতাস বইছে তাদের মাঝে।

এ বিষয়ে মিরপুরে ১১-তে বসবাস করা বিজয় কুমার নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘আমার অফিস মতিঝিলে। তাই এতদিন মেট্রোরেল সীমিতভাবে চলাচলে আমার কোনও সুবিধা হয়নি। অপেক্ষায় ছিলাম কবে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হবে। কবে ভোগান্তি ছাড়াই একটানে অফিস যাবো, একটানে বাসায় ফিরবো।’

মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মিরপুরের আরেক কর্মজীবী সাইফ বলেন, ‘মরার পর যদি ঢাকাবাসীদের জিজ্ঞাস করা হয়, জীবনের অধিকাংশ সময় কী কাজে ব্যয় করছ। আমাদের বলতে হবে রাস্তায় কাটায়া দিছি (কাটিয়ে দিয়েছি)। এ ছাড়া আর কোনও উত্তর নাই। এতদিন কেবল ভোগান্তি আর ভোগান্তি। মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে পল্টনের দিকে যেতেও আমি অন্তত আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল ব্যবহার করি। আর অপেক্ষায় থাকতাম কবে মতিঝিল পর্যন্ত চালু হবে। এখন সেই অপেক্ষাও শেষ। আশা করবো খুব দ্রুত সবগুলো স্টেশন চালু করা হবে।’

পরিবার ও স্বজনদের জন্য সময় বাড়বে
মেট্রোরেলের এই অংশটিও চালু হওয়ার ফলে এখন থেকে পরিবারকে বেশি সময় দেওয়া যাবে, মানসিক প্রশান্তিও মিলবে মন্তব্য করে কাজীপাড়ার বাসিন্দা ফয়জুল আহমেদ বলেন, ‘ঢাকায় অফিস আওয়ারে চলাচলে অন্তত ৩-৪ ঘণ্টা, কখনও বাস না পাওয়া গেলো ৫ ঘণ্টাও রাস্তায় থাকতে হয়। পরিবার থেকে এত সময় শুধু অকারণেই দূরে থাকতে হচ্ছে, এটা তো পরিবারের সঙ্গে আমার কেবল দূরত্বই বাড়াচ্ছে। আর মানসিক অশান্তি তো ছিলই। এখন মেট্রোরেল হওয়াতে আধা ঘণ্টায় চলে আসতে পারবো। বাকি তিন ঘণ্টা পরিবার, সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবো। এর জন্য আমি সরকার ও মেট্রোরেল সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’

এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, মেট্রোরেল আমাদের জন্য নতুন মাইলফলক। যাত্রীদের সময়, অর্থ, স্বাস্থ্য সবই বাঁচবে। তবে কেবল মেগাপ্রকল্প দিয়ে ঢাকার গণপরিবহন সমস্যার সমাধান করা যাবে না। পাশাপাশি সরকারকে ব্যবস্থাপনার দিকেও নজর দিতে হবে। সড়কে চলা বাসগুলোর উন্নতিকরণেও জোর দিতে হবে।’

মেট্রোরেল সর্বসাধারণের পরিবহন করতে হলে ভাড়া কমানোর বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পাশ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশের মেট্রোরেলের ভাড়া বেশি। এটা যদি কমানো হয় তাহলে সকল যাত্রীরা ব্যবহার করতে পারবে। মেট্রোরেল একটি সাশ্রয়ী যান হবে।’