বিমানবন্দরে উদ্ধার শত কেজি ময়ূরের পালকের মালিক কে, মাংসের নমুনা পরীক্ষাগারে


assroy প্রকাশের সময় : অগাস্ট ১৯, ২০২৩, ৫:৫৬ অপরাহ্ন /
বিমানবন্দরে উদ্ধার শত কেজি ময়ূরের পালকের মালিক কে, মাংসের নমুনা পরীক্ষাগারে

তিন দিন আগে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার ময়ূরের ১০০ কেজি পালক ও ১০ কেজি মাংসের মালিকের হদিস এখনো মেলেনি। কোথা থেকে এগুলো এল, কে সংগ্রহ করেছে, কারা তা চীনে পাচারের চেষ্টায় জড়িত—সেসব তথ্য জানতে পারেনি পুলিশ।

অবশ্য ময়ূরের পালক ও মাংস পাচারের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার দুজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বিমানবন্দর থানা-পুলিশ। মাংস কোন প্রাণীর, তা জানতে ফরেনসিক পরীক্ষাগারে নমুনা পাঠানো হয়েছে।

বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুল হক মিঞা আজ শনিবার রাত আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, রেজাউল করিম ও সোহানুর রহমান নামের দুই ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে কারা এগুলো এনেছে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

গত বুধবার রাত দুইটায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটটি কার্টনের ভেতর থেকে ময়ূরের ১০০ কেজি  পালক ও ১০০ কেজি মাংস জব্দ করে ঢাকার বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। পরে সংস্থাটির পরিদর্শক অসীম মল্লিক সেদিন বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন।

বিমানবন্দরে কে দিয়ে গেল এত পালক

বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা রেজাউল করিম পর্যটন ভিসায় চীনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। তখন অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি তাঁকে দুটি কার্টন চীনে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। বিনিময়ে তাঁকে ১২ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিলেন সেই ব্যক্তি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক সুমন সিকদার আজ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রেজাউল করিম দাবি করেছেন, ময়ূরের পালক সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি তাঁকে দুটি কার্টন চীনে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিলেও পরে তাঁর নামে আটটি কার্টন ইস্যু করা হয়। এটি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পর রেজাউলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাঁর কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হলে কার্টন খুলে দেখার সিদ্ধান্ত হয়। কার্টন খুলে ময়ূরের পালক ও মাংস থাকার বিষয়টি জানা যায়। পরে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটকে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর রেজাউল করিমকে থানায় সোপর্দ করা হয়।

জানতে চাইলে বন্য প্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিক আজ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ময়ূর আমাদের দেশের বন্য প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত নয়। বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাইরে থেকে ময়ূর আমদানি করা হয়। তারপরও ১০০ কেজি ময়ূরের পালক কারা সংগ্রহ করল, কীভাবে সংগ্রহ করল, সেটি জানাটা খুব জরুরি।’
এদিকে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট জানিয়েছে, বিমানবন্দর থেকে আটক ১০ কেজি মাংস কোন প্রাণীর, সেটি জানার জন্য মাংসের নমুনা ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তবে সেই পরীক্ষার ফলাফল এখনো হাতে পায়নি সংস্থাটি।

বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক মো. ছানাউল্ল্যা পাটওয়ারী আজ প্রথম আলোকে বলেন, বিমানবন্দর থেকে আটক মাংসের নমুনার ফলাফল হাতে পাওয়ার আগপর্যন্ত বলা যাবে না, সেই মাংস আসলে কোন প্রাণীর। ফরেনসিক প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত বন বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বছরের নির্দিষ্ট সময় পরপর ময়ূরের পালক গজায়। একসঙ্গে সব পাখনা কিন্তু পড়ে না।

জানতে চাইলে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় চিড়িয়াখানায় অনেকগুলো ময়ূর রয়েছে। আমরা দেখেছি, একটা নির্দিষ্ট সময় পর ময়ূরের পালক পড়ে যায়। একটি-দুটি করে পড়তে থাকে। পরে আবার নতুন করে পালক গজায়। কিন্তু আমাদের দেশে এত ময়ূর নেই যে একসঙ্গে ময়ূরের ১০০ কেজি পালক একত্র করা সম্ভব হয়। কীভাবে ময়ূরের এত পরিমাণ পালক একসঙ্গে করা হলো, সেটার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া দরকার।’

বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বন্য প্রাণী ও প্রকৃত সংরক্ষণ অঞ্চলের অনুমোদন ছাড়া বন্য প্রাণী আমদানি বা রপ্তানি করা সম্ভব নয়। পাচারের উদ্দেশ্যেই ময়ূরের পালক বিমানবন্দরে নেওয়া হয়েছিল।