বগুড়া প্রতিনিধি
বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর অবরোধ কর্মসূচিতে সারা দেশের মতো বগুড়ার হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ ও খাবার হোটেলের ব্যবসায় ধস নেমেছে। রাজনৈতিক অস্থিতরতায় পর্যটক কমে যাওয়ায় মহাস্থান জাদুঘরেও জনসমাগম নেই। জেলায় প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খাতে ভর্তুক দিতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ‘হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ না হলে পর্যটন খাত ধ্বংস হয়ে যাবে।’
বগুড়া পর্যটন মোটেলের প্রশাসন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সবুজ মিয়া জানান, তাদের এখানে মোট ২৮টি রুম রয়েছে। হরতাল-অবরোধের কারণে পর্যটকের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। বুধবার (১৫ নভেম্বর) বেলা ৪টা পর্যন্ত সাতটি রুম বুকিং হয়েছে। জাপানি দুজন পর্যটক ছিলেন, অবরোধের খবর পেয়ে তারাও মঙ্গলবারই চলে গেছেন।
আগে প্রায় প্রতিদিন অন্তত ১০০ জন এখানে দেশি ও চায়নিজ খাবার খেতে আসতেন উল্লেখ করে তিনি জানান, অবরোধের কারণে এখন সর্বোচ্চ ২৫ জন আসছেন। এতে তাদের প্রতিষ্ঠানের অনেক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
বগুড়ার একমাত্র পাঁচ তারকা হোটেল মম ইন-এর গেস্ট রিলেশন্স অফিসার মাহীর ফয়সাল জানান, অবরোধের কারণে পর্যটক আসা কমে গেছে। তাদের প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মানের মোট ২০৪টি রুম রয়েছে। বুধবার মাত্র ৪৬টা রুম বুকিং হয়েছে। এর অধিকাংশই বগুড়ায় শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলতে আসা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) লোকজন। তারা না এলে এই রুমগুলোও ফাঁকা থাকতো। অবরোধের কারণে পর্যটক না থাকায় তাদের ব্যবসার অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।
বগুড়া চার তারকা হোটেল নাজ গার্ডেনের স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ শোকরানা জানান, তার প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের ১০১টি রুম রয়েছে। এখানে বিদেশি পর্যটকই বেশি আসেন। অবরোধের কারণে তার ব্যবসায় ধস নেমেছে। বুধবার পাঁচ জন বিদেশি ও দেশের পাঁচ জন পর্যটক রয়েছেন। খাবার খেতে আসা জনগণের সংখ্যাও অনেক কমে গেছে। অনেকে বুকিং বাতিল করেছেন। বিয়েসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান হচ্ছে না।
এই হোটেলে ১৪০ জন স্টাফ রয়েছেন উল্লেখ করে এই উদ্যোক্তা বলেন, মাসে তাদের ২৬ লাখ টাকা বেতন-ভাতা দিতে হয়। এভাবে হরতাল অবরোধ চললে তার ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মোহাম্মদ শোকরানা।
একই অবস্থা জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলোর। বগুড়ার মহাস্থান যাদুঘরের কাস্টডিয়ান রাজিয়া সুলতানা জানান, অন্যান্য দিন অনেক পর্যটক এলেও বুধবার এসেছেন মাত্র ৩০০ জন।
বগুড়া শহরের আকবরিয়া গ্র্যান্ড হোটেল, সেলিম হোটেল, শ্যামলী ইন, সিয়েস্তা মোটেল, নর্থওয়ে মোটেলের কর্মকর্তারা জানান, বিএনপি জামায়াতের হরতাল ও অবরোধের কারণে পর্যটন আসতে না পারায় তাদের ব্যবসার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আবাসিক হোটেলে অধিকাংশ রুম ফাঁকা থাকছে। নাস্তা, লাঞ্চ ও ডিনারে লোকজন আসা কমে গেছে। বসে বসে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে হচ্ছে।
২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ করতে না পারার প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল, ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধ, দ্বিতীয় দফায় ৫ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে ৭ নভেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত অবরোধ, তৃতীয় দফায় ৮ ও ৯ নভেম্বর, চতুর্থ দফায় ১২ ও ১৩ নভেম্বর এবং পঞ্চম দফায় ১৫ ও ১৬ নভেম্বর অবরোধ ঘোষণা করা হয়। এই কর্মসূচি শেষ হতে না হতে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। আগামী রবিবার (১৯ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী হরতাল পালন করবে দলটি।
এমন পরিস্থিতিতে বগুড়া হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি জিএম সাকলায়ের বিটুল জানান, তাদের সংগঠনের আওতায় অন্তত ২০টি হোটেল, মোটেল আছে। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল বা অবরোধে অন্য জেলার মতো বগুড়াও পর্যটন শূন্য হয়ে পড়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ অন্যান্য খাতে বিপুল অংকের টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
শহরের মফিজ পাগলার মোড় এলাকায় তার মালিকানাধীন ম্যাক্স মোটেলে বিভিন্ন ধরনের ৩১টি রুম রয়েছে। পঞ্চম দফা অবরোধের দ্বিতীয় দিন বুধবার বিকাল পর্যন্ত পাঁচটি রুম বুকিং হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ব্যবসার অবস্থা খারাপ। মানুষের হাতে টাকা না থাকায় তারা খেতে বা থাকতে আসছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে পর্যটন খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। বেকার হয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ।’
আপনার মতামত লিখুন :