যশোর প্রতিনিধি
যশোরে অস্ত্র উদ্ধারের নামে মো. ইউনুস আলী নামে (৩৫) এক রিকশাচালককে র্যাব সদস্যরা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সাংবাদিকদের কাছে নির্যাতনের বর্ণনা দেন ইউনুস আলী। এ সময় শরীরের কয়েক জায়গায় জখমের চিহ্ন দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল রবিবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আমার ঘরে ঢুকে লাঠি দিয়ে মারধর করেছেন র্যাব সদস্যরা।’
ইউনুসের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায়। তিনি যশোরের চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তার মা রাবেয়া বেগম বাড়িতে বাড়িতে বিভিন্ন শাকপাতা বিক্রি করে সংসার চালান। তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন র্যাব-৬-এর যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
প্রেসক্লাব যশোরে এসে ইউনুস আলী ও তার মা রাবেয়া বেগম জানান, তারা যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া (সার গোডাউনের পাশে) এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। ইউনুস অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। মাঝেমধ্যে স্থানীয় কাউন্সিলর সুমনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেন। রবিবার বিকালে মামুন নামে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে পাঁচ ব্যক্তি তাদের বাড়িতে আসেন। তারা র্যাব পরিচয় দিয়ে ইউনুসকে অস্ত্র বের করে দিতে বলেন। তার কাছে কোনও অস্ত্র নেই জানালে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কয়েক দফায় মারধর করা হয়। এতে শরীরের বিভিন্ন স্থান জখম হয়ে ফুলে যায়। যারা এসেছিলেন তারা সাদা পোশাকধারী ছিলেন। তাদের মধ্যে দুই জনের বড় বড় চুল ছিল। ঘরের ভেতর ঢুকেই ইউনুসকে মারধর শুরু করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউনুসের কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, ছোটবেলা থেকে তারা ইউনুসকে দেখে আসছেন। কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়। র্যাব নিরীহ ছেলেটিকে বেধড়ক মারধর করেছে।
এমন নির্যাতনকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক। খবর পেয়ে তিনি প্রেসক্লাবে এসে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেন। বিনয় কৃষ্ণ বলেন, ‘ইউনুস চাইলে আমরা তাকে আইনি বিষয়ে সহায়তা করবো।’
এ ব্যাপারে র্যাব-৬-এর যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় আমরা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছি। ইউনুসের কাছে একটি অস্ত্র রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। সেখানে তাকে এবং তার মাকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ইউনুস প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেন, তার কাছে এক ব্যক্তি একটি অস্ত্র রেখে গিয়েছিল। পরে সেটি আবার নিয়েও যায় সে ব্যক্তি। যেহেতু অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি সেহেতু মায়ের জিম্মায় তাকে রেখে আসি, ক্যাম্পেও আনিনি।’
ইউনুসের শরীরে জখমের চিহ্ন থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সাকিব হোসেন বলেন, ‘তাকে মারধরের কোনও ঘটনা ঘটেনি। মারধরের ঘটনায় র্যাবের কেউ সম্পৃক্ত নয়।’
আপনার মতামত লিখুন :