আশ্রয় ডেস্ক
দীর্ঘদিন ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলন করে আসা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি জোটগতভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তিনটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে নতুন জোট নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে দলটি। বুধবার (২২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এমন ঘোষণা দেওয়ায় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে তার নির্বাচনি এলাকা চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বিএনপি। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের জোট ছেড়ে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন বিএনপির নেতারা ।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) হাটহাজারী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নূর মোহাম্মদ ও সদস্যসচিব গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বর্তমান সরকার অবৈধ এবং আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি যুক্তফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এতে হাটহাজারীর সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এজন্য হাটহাজারী উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন।’
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘২০১৮ সালের নিজ দলের শতভাগ যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিয়ে মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিমের মতো একজন ‘সিঙ্গেল ম্যানের’ (একক নেতার) জোটকে সম্মান দেখিয়ে বিএনপি ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছিল। তার পক্ষে বিএনপির সব ইউনিট (শাখা) কাজ করেছে। কিন্তু তখনও তিনি সে সময়ের মহাজোট প্রার্থীর কাছে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিজেকে আত্মসমর্পণ করেন। ইবরাহিমের হয়ে নির্বাচনের কাজ করতে গিয়ে হাটহাজারী বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের বহু নেতাকর্মী হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে কারও খোঁজখবর নেননি সৈয়দ ইবরাহিম। তাই আমরা হাটহাজারী উপজেলা, পৌরসভা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলাম। পাশাপাশি তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম। আর যদি হাটহাজারী উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি পরিবারের কেউ ইবরাহিমকে কোনোভাবে সহযোগিতা করেন বা যোগাযোগ রাখেন, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
এ ব্যাপারে হাটহাজারী উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বিএনপির সঙ্গে জোট করে ২০১৮ সালে ধানের শীর্ষ প্রতীক নিয়ে হাটহাজারী আসন থেকে নির্বাচন করেন। তখন তার ভোট করতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এখন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে জোট করে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এই সরকারের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ঘৃণিত কাজ করেছেন তিনি। এজন্য আমরা তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেইমানি করা সৈয়দ ইবরাহিমের স্বভাবসিদ্ধ ব্যাপার। ১৯৯৬ সালে জেনারেল নাসিমের অভ্যুত্থানের পক্ষে ছিলেন তিনি। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস কর্তৃক মেজর জেনারেল হেলাল মোর্শেদ খানের সঙ্গে বরখাস্ত হন সৈয়দ ইবরাহিম। হেলাল মোর্শেদ খান এখন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। ২০১৮ সালে বিএনপি নিজ দলের যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিয়ে ইবরাহিমের মতো একজন সিঙ্গেল ম্যানকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে ভুল করেছে।’
এর আগে বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন সৈয়দ ইবরাহিম। তিনি নতুন ওই জোটের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মানে ‘আত্মহত্যা’ করা–অতীতে এমন মন্তব্য করেছিলেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধিতা করলেও হঠাৎ কেন নির্বাচনের সিদ্ধান্ত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এবং আমার নেতাকর্মীরা কষ্ট করে রাজনীতিটাকে টিকিয়ে রেখেছি। আমাদের টিকে থাকার একটা সীমা আছে। সেই সীমা আমরা ধরে রেখেছি। কিন্তু আমার এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অক্ষমতা হলো, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আর পেরে উঠছি না। তাই এখন আমাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে–নিশ্চুপ থাকবো নাকি বিকল্প পন্থা অবলম্বন করবো। গত ২৮ অক্টোবরের পর এটা একটা সুনির্দিষ্ট অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। বিকল্প পন্থা নিলাম। কারণ, আমি যে কথাগুলো বলার চেষ্টা করি, সেটা সংসদে গিয়ে বলবো।’
আপনার মতামত লিখুন :