গোপালগঞ্জের প্রথম স্মার্ট ইউনিয়ন হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে ননীক্ষীর


Assroy প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৫, ২০২৩, ৭:৫৯ পূর্বাহ্ন /
গোপালগঞ্জের প্রথম স্মার্ট ইউনিয়ন হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে ননীক্ষীর

আশ্রয় ডেস্ক

গোপালগঞ্জের প্রথম স্মার্ট ইউনিয়ন হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে ননীক্ষীর ইউনিয়ন। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে ওয়েবসাইট ও অ্যাপস। এ দিয়ে ঘরে বসেই ইউনিয়নবাসী ল্যাপটপ অথবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিতে পারবে ৩৬ ধরনের নাগরিক সেবা। এছাড়া বেকারদের দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি ইউনিয়নের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। সুবিধাভোগীরা বলছেন স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে এমন উদ্যোগ দেশের অন্য চেয়ারম্যানদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। আর উপজেলা প্রশাসন বলছে শুধু ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদই নয় সাফল্য পেলে বাকী ইউনিয়নও স্মার্ট ইউনিয়নের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সরেজমিতে ননীক্ষীর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা ও জানাগেছে, ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের পর ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। যার ভিত্তি থাকবে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ। এ পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদ।
স্মার্ট ইউনিয়ন গড়তে ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের শেখ রনি আহমেদের উদ্যোগে ইউনিয়নের জন্য তৈরি করা হয়েছে ননীক্ষীর স্মার্ট ইউনিয়ন পরিষদ নামে একটি ওয়েবসাইট ও অ্যাপস। যেখানে ওই ইউনিয়নের প্রতিটি পরিবারের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য, ছবি, মোবাইল নম্বর, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, আয় ব্যয়ের তথ্য, ভাতা সুবিধা, হোল্ডিং ট্যাক্স, আয়কর, কৃষি-অকৃষি জমিসহ ৩৬ ধরনের ডাটা থাকবে। যার মাধ্যমে ইউনিয়নের প্রতিটি পরিবারের বেকার যুবকদের সনাক্ত করে কর্মসংস্থানের জন্য দেওয়া হবে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি একই অ্যাপস এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ভোগান্তি ছাড়া ঘরে বসেই মোবাইল অথবা ল্যাপটপ দিয়ে নিতে পারবেন জন্ম ও মৃত্যু সনদ, বিভিন্ন ধরনের ভাতা। ফলে সেবা পেতে কমে আসবে দুর্ভোগ।
এদিকে, ইউনিয়নের প্রতিটি পরিবারের বেকার যুবক যুব মহিলাদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে গড়ে তোলা হয়েছে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেখানে বিনামূল্যে ৭২ জনকে দুই মাসব্যাপী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এর আগের ব্যাচে ৭৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরির পিছনে না ঘুরে নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে গড়ে উঠতে পারবে বেকার যুবক-যুব মহিলারা।
এছাড়া, ইউনিয়নের প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে বসানো হয়েছে বায়োমেট্রিক হাজিরা । ইউনিয়নটির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এগুলো সরাসরি মনিটরিং করা হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে। সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পর থেকে ইউনিয়নে কমেছে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-।
কম্পিউটার প্রশিক্ষণার্থী আশিক সরদার জানান, ননীক্ষীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ রনি আহমেদের উদ্যোগে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা যারা বেকার রয়েছি তারা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারছি। প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রিল্যার্সিং এর মাধ্যমে বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারছি।
অপর কম্পিউটার প্রশিক্ষণার্থী রিমি আক্তার বলেন, বাংলাদেশের এখন চাকরীর বাজার খুব স্বল্প। তারপরেও চাকুরী পেতে গেলে কম্পিউটার শেখাটা জরুরী। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা নিজেদের তৈরীর করতে পারছি।
কম্পিউটার প্রশিক্ষক দিদারুল ইসলাম রাজীব ও রাব্বি হোসেন বলেন, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিনামূল্যে ৭২ জনকে দুই মাসব্যাপী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এর আগের ব্যাচে ৭৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরির পিছনে না ঘুরে নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে গড়ে উঠতে পারবে বেকার যুবক-য্বুব মহিলা ।
এলাকাবাসী শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন বলেন, ইউনিয়নের ওয়েবসাইটে আমাদের তথ্য থাকায় আমরা অনেক সুবিধা পাচ্ছি। সহজেই আমরা জন্ম ও মৃত্যু সনদ পাচ্ছি । এখানে কোন ভোগান্তি নেই। এছাড়া সরকারী ভাতা প্রদানে গতি এসেছে। যার ভাতা তিনিই পাচ্ছেন। এতে সরকারী সব সুযোগ সুবিধা সহজেই মিলছে । ঘরে বসে আমরা ৩৬ ধরনের সুবিধা পাচ্ছি।
ননীক্ষীর বাজারের ব্যবসায়ী আকিদুল ইসলাম বলেন, ননীক্ষীর ইউনিয়নের পুরো এলাকা জুড়ে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এতে আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। এখন রাতে দোকানে থাকতে হয় না। আমরা নিশ্চিন্তে দোকান রেখে বাড়িতে যেতে পারি। এতে এলাকায় চুরি ডাকাতি সহ অপরাধ প্রবণতা কমেছে ।
ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রনি আহমেদ বলেন, ডিজিটাল থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশে রুপান্তরের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার । এটি তারই এক অংশ বিশেষ আমরা বাস্তবায়ন করছি। এখান থেকে মানুষ ৩৬ ধরনের সুবিধা পচ্ছেন। এতে ইউনিয়নবাসী ভোগান্তি ছাড়াই সেবা পাচ্ছেন । এছাড়া যিনি ভাতা পাওয়া যোগ্য, তিনিই ভাতা পাচ্ছে। শুধু ননীক্ষীর নয় সকল চেয়ারম্যানের উচিত নাগরিক সুবিধা নিশ্চেতে এমন উদ্যোগ নেওয়া।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সভাপতি ড. মোঃ আবু সালেহ বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এমন উদ্যোগ বড় ভুমিকা রাখাবে। পাশাপাশি দেশের অন্যসব ইউনিয়নের জন্য এটি অনুকরণীয় হতে পারে। এটি সকল ইউনিয়নে হলে নাগরিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। কমে আসবে ভোগান্তি। সকল ইউনিয়নে এমন উদ্যোগ নিলে দ্রুত বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশে রুপান্ত হবে।
মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম ইমাম রাজী টুলু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষীন ইউনিয়নকে স্মার্ট ইউনিয়ন হিসেবে গোড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একটি ওয়েবসাইট ও একটি অ্যাপসের মাধ্যেমে এ ইউনিয়েনের সাধারণ মানুষ ঘরে বসেই ৩৬ ধরনের সেবা পাচ্ছে। ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদ সাফল্য পেলে বাকী ১৫টি ইউনিয়নও স্মার্ট ইউনিয়নের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এমন উদ্যোগে সাধারণ মানুষের নাগরিক সেবা প্রাপ্তিতে যেমন ভোগান্তি কমাবে, তেমনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে বড় ভুমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি ।