চমেক হাসপাতালে হার্টে রিং পরানো ও এনজিওগ্রাম বন্ধ


Assroy প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৪, ২০২৪, ১২:৩০ অপরাহ্ন /
চমেক হাসপাতালে হার্টে রিং পরানো ও এনজিওগ্রাম বন্ধ

আশ্রয় ডেস্ক

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সচল ক্যাথল্যাব মেশিনটিও নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে হৃদরোগীদের হার্টে রিং পরানো, পেসমেকার স্থাপন, এনজিওগ্রাম ও ভালভ সম্প্রসারণের (পিটিএমসি) মতো জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা সেবা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন হৃদরোগে আক্রান্ত গরিব রোগীরা। কবে নাগাদ ক্যাথল্যাব মেশিনটি সচল হবে সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের ল্যাবে ছিল দুটি ক্যাথল্যাব মেশিন। এর মধ্যে প্রথমটি নষ্ট হয় ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর। প্রায় পাঁচ কোটি টাকায় কেনা জাপানের শিমার্জু ব্র্যান্ডের এই ক্যাথল্যাব মেশিন স্থাপন করা হয় ২০১৬ সালে। শুধুমাত্র মেশিনটির একটি এক্সরে টিউব নষ্ট হওয়ায় সেটি অকেজো হয়ে গত দুই বছর ধরে পড়ে আছে। যা সচল করতে করতে কোটি টাকার বেশ চাওয়া হচ্ছে। ওই টাকার জোগান দিতে না পারায় মেশিনটি দুই বছরের বেশি সময় ধরে অচল হয়ে পড়ে আছে।

এরই মধ্যে ৪ জানুয়ারি এক রোগীর হার্টের রিং বসানোর সময় নষ্ট হয়ে যায় সচল ক্যাথল্যাব মেশিনটিও। এরপর থেকে হৃদরোগ বিভাগে বন্ধ রয়েছে হাটে রিং পরানোসহ ক্যাথল্যাব সহায়ক সব ধরনের চিকিৎসা সেবা। সরকারি এ হাসপাতালে নামমাত্র মূল্যে রোগীরা যে ধরনের চিকিৎসা সেবা পেত। এখন একই চিকিৎসা পেতে বেসরকারি হাসপাতালে অনেকগুণ বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।

২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ৪ জানুয়ারি অচল হওয়া এনজিওগ্রাম মেশিনটি স্থাপন করা হয়। পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকায় কেনা এ মেশিনের সাত বছরের ওয়ারেন্টি ছিল। ইতোমধ্যে ক্যাথল্যাব সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেডিগ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেডের প্রকৌশলীরা তিন দিন চেষ্টা চালিয়েও ত্রুটি সারাতে পারেননি। এ মেশিনের টিউব নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান তারা। যেটি আনতে হবে জাপান থেকে। যা সময় সাপেক্ষ বলছে চমেক হাসপাতাল কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ এই এনজিওগ্রাম মেশিনটি দিয়ে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ জন হৃদরোগীর এনজিওগ্রাম, ৫ থেকে ৭ জন রোগীর এনজিওপ্লাস্টিক করা হয়। এর বাইরে হার্টে স্থায়ী পেসমেকার (পিপিএম) স্থাপন ও পেরিপাইরাল এনজিওগ্রামের চিকিৎসাও হতো এ মেশিনের সাহায্যে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চমেক হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করতে সবমিলিয়ে রোগীদের খরচ হতো ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। যা বাইরে বেসরকারি হাসপাতালে একই চিকিৎসা পেতে রোগীদের খরচ করতে হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। একইভাবে হার্টের একটি রিং স্থাপনে চমেক হাসপাতালে ব্যয় হতো ৯০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা। বেসরকারি হাসপাতালে একই সেবা নিতে খরচ করতে হচ্ছে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।

চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. আশীষ দে বলেন, ‘গত ৪ জানুয়ারি থেকে হৃদরোগ রোগীদরে চিকিৎসায় অতিগুরুত্বপূর্ণ ক্যাথল্যাব মেশিনটি নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে আমাদের স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী অনেক ক্ষতি হচ্ছে। যেমন হার্টবিট কম নিয়ে আসা রোগীদের পেসমেকার করে রোগীর জীবন রক্ষা করা যেত। ক্যাথল্যাব নষ্ট হওয়ায় এখন তা করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে অনেক গরিব রোগী কম খরচে এনজিওগ্রাম এবং হার্টের রিং লাগাতো। তারা এখন করতে পারছে না। যা বাইরে বেসরকারি হাসপাতালে অনেক ব্যয়বহুল।’

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ক্যাথল্যাব মেশিন নষ্ট হওয়ার বিষয়টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে জানিয়েছি। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রকৌশলীরা এসে তা দেখে গেছেন। ত্রুটি সারানোর জন্য মেশিনটির ডাটাবেজ সংগ্রহ করে তা জাপানে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়েছে। তারা কিছুদিন সময় চেয়েছে। আমরা বলেছি, তাদের কাছে যদি কোনও বিকল্প যন্ত্রপাতি থাকে তাহলে তা দিয়ে হলেও ক্যাথল্যাব মেশিনটি চালুর ব্যবস্থা করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে একটি মাত্র ক্যাথল্যাব দিয়ে হৃদরোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এটি যেকোনও সময় নষ্ট হতে পারে তা আশংকা প্রকাশ করে গেলো বছর মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয় থেকে একটি নতুন মেশিন দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। তবে এখন পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি।’