রোপা আমন ধান কাটা মাড়াই চলে একদিকে, আরেকদিকে চলে আলু বীজ বপনের জন্য জমি তৈরির প্রস্তুতি। এভাবেই জয়পুরহাটের প্রসিদ্ধ ফসল আলুতে ভরে ওঠে মাঠ ঘাট। আলু চাষে উদ্বৃত্ত জেলা জয়পুরহাটে এবার নিবিড় বার্ষিক ফসল উৎপাদন কর্মসূচির ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন বলেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলায় চলতি মৌসুমে ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ ও ৯ লাখ ২৭ হাজার ৬৭৯ মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। আলু উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলের ছোট জেলা জয়পুরহাটে আলু চাষ সফল করতে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বাসস’কে জানায়, চলতি ২০২৩-২৪ নিবিড় বার্ষিক ফসল উৎপাদন কর্মসূচির আওতায় জেলায় ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে আলু লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলা ভিত্তিক আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৭৬৫ শ হেক্টর, পাঁচবিবি উপজেলায় ৬ হাজার ৯১০ হেক্টর, ক্ষেতলাল উপজেলায় ৮ হাজার ৫৮০ হেক্টর, কালাই উপজেলায় ১০ হাজার ৭১০ হেক্টর ও আক্কেলপুর উপজেলায় ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমি। এতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ২৭ হাজার ৬ শ ৭৯ মেট্রিক টন। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হয়ে থাকে।
কৃষি বিভাগ জানায়, আলু চাষ সফল করতে জেলায় সারের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে। ৬ নভেম্বর পর্যন্ত মজুত সারের পরিমান ছিল ৮ হাজার ৩২৭ মেট্রিক টন। এরমধ্যে ছিল ইঊরিয়া ২ হাজার ৯৪৬ মে. টন, টিএসপি ১ হাজার ২৯৩ মে.টন, এমওপি ১ হাজার ৮৪২ মে. টন ও ডিএপি ২ হাজার ২৪৬ মে. টন। এরসঙ্গে নভেম্বর মাসে সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার ৯২৬ মেট্রিক টন সার। যারমধ্যে রয়েছে ইঊরিয়া সার ৫ হাজার ৪২২ মে. টন, টিএসপি ৩ হাজার ১০০ মে. টন, এমওপি ৫ হাজার ৮০০ মে. টন ও ডিএপি ৪ হাজার ৬০৪ মে. টন । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকারের বিভিন্ন ধরনের আগাম প্রস্তুতি গ্রহনের ফলে জেলায় আলু বীজ বা রাসায়নিক সারের কোন প্রকার সমস্যা হয়নি এবং আলু চাষের জন্য ইউরিয়া ও এমওপি সারের অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলেও জানায় কৃষি বিভাগ। জেলায় আলু চাষ সফল করতে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষন সহ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন।
এ ছাড়াও বিএডিসি’র পক্ষ থেকে কৃষকদের মাঝে উন্নত জাতের আলু বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) জয়পুরহাটের সিনিয়র সহকারী পরিচালক বিপ্লব কুমার মহন্ত। জেলায় ১৩০ জন বীজ ডিলারকে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫ মেট্রিক টন করে উন্নত মানের আলু বীজ বিক্রির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। বিএডিসি’র উন্নত মানের এক কেজি আলু বীজের এবারের মূল্য হচ্ছে সাড়ে ৫৮ টাকা। বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে ব্র্যাক, এসিআই, স্পাহানী, মেটাল ও সুপ্রীম সীড কোম্পানীর উন্নত জাতের আলু বীজও বাজারে পর্যাপ্ত রয়েছে যাতে করে আলু বীজের কোন সমস্যা হবেনা বলে জানায় কৃষি বিভাগ। আলু বীজের ভেজাল প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ কঠোর অবস্থানে রয়েছে কৃষি বিভাগ বলে জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন।
জয়পুরহাটের আলু উন্নত মানের হওয়ায় গত বছর দেশের গন্ডি পেরিয়ে ৯ টি দেশে রপ্তানী করা হয়। দেশ গুলো হচ্ছে, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, নেপাল ও রাশিয়া। প্রাচীন বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাট জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে আলুর চাষ হয়ে থাকে। গত বছর ৩৬ হাজার ৫শ ৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। এতে আলু উৎপাদন হয় ৮ লাখ ১৫ হাজার মে: টন। ফলন ভালো হওয়ায় জেলায় গ্যানোলা, মিউজিকা, ডায়মন্ড, এস্টোরিকস, কার্ডিনাল, ও রোজেটা জাতের আলু বেশি চাষ করে থাকেন কৃষকরা। জেলার ১৫ টি কোল্ড ষ্টোরেজে প্রায় দেড় লাখ মে: টন আলু রাখা সম্ভব হয় বলে জানায়, কৃষি বিভাগ।
আপনার মতামত লিখুন :