আশ্রয় ডেস্ক
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এখন তিল ধারণের ঠাই নেই। তিনটি ইউনিটে ৬০ বিছানার বিপরীতে বর্তমানে ভর্তি শিশু সংখ্যা ২৮২। প্রতি শয্যার বিপরীতে প্রায় পাঁচ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শিশু ওয়ার্ডে দুই শিশু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডের তিনটি ইউনিট রয়েছে। এক নম্বর ইউনিটে ২০ বিছানার বিপরীতে বর্তমানে রোগী ভর্তি রয়েছে ৮৯। দুই নম্বর ইউনিটে ২০ বিছানার বিপরীতে ভর্তি আছে ১০২ ও তিন নম্বর ইউনিটের ২০ বিছানার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯১। এই হিসেবে তিন ইউনিটে বর্তমানে ভর্তি শিশুরোগীর সংখ্যা ২৮২।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার বিশ্বজিৎ চৌধুরী জানান, জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই তীব্র শীতের কারণে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শীতজনিত নিউমোনিয়া শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। ওয়ার্ডে বিছানার তুলনায় পাঁচ গুণ রোগী প্রতিদিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসক নার্স অন্য কর্মচারীরা দিনরাত পরিশ্রম করে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত রোগী থাকলেও মানসম্মত সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হচ্ছে না।
হাসপাতালের এক নম্বর ইউনিটে ভর্তি হওয়া ময়মনসিংহ সদরের বুড়োরচর গ্রামের কামরুল রহিমা দম্পতির এক বছরের শিশু কন্যা ফাতেমা শ্বাসকষ্ট নিয়ে শনিবার ভর্তি হন। ফাতেমার মা রহিমা জানান, জ্বরের পর শ্বাসকষ্টের কারণে বুকের দুধ টেনে খেতে পারতো না। খুব কান্নাকাটি করতো। পরে গত শনিবার হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তারপর চিকিৎসকরা বলেন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এরপর থেকে ইনজেকশনসহ চিকিৎসা চলছে এখন আস্তে আস্তে ভালোর দিকে।
ময়মনসিংহে ত্রিশাল উপজেলার রানীহারি গ্রামের আব্দুস সালামের দুই বছরের শিশু পুত্র মালেককে ভর্তি করা হয় হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের দুই নম্বর ইউনিটে। আব্দুস সালাম জানান, প্রচণ্ড শীতের কারণে প্রথমে জ্বর পরে ঠান্ডা লাগে তারপরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অবস্থা খারাপ হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব ওষুধপত্র বিনামূল্যে দিচ্ছে এখন অনেকটাই ভালো।
অপর রোগীর স্বজন কামরুন নাহার জানান, শিশু ওয়ার্ডের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পা ফেলার জায়গা নেই। বিছানা তো দূরের কথা মেঝেতেও শিশুদের জায়গা হচ্ছে না। অনেক চাপাচাপি করে কষ্ট করে রোগী নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন। তবে চিকিৎসক এবং কর্মচারীরা ভালো চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে।
হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শীত এলেই শিশু ওয়ার্ডে রোগী সংখ্যা বেড়ে যায়, এবারও শীতের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন ইউনিটে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতাল থেকে সব রোগীকে বিনামূল্যে সরবরাহ করা ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে। চিকিৎসক নার্স এবং অন্যান্য কর্মচারীরা আন্তরিকভাবে এসব রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
আপনার মতামত লিখুন :