আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউক্রেনের যুদ্ধ একটি অচলাবস্থায় পৌঁছেছে, এমনকি ইউক্রেনের কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন যে পালটা আক্রমণেও এখন আর তাদের অগ্রগতির কোনও সম্ভাবনা নেই। শীতকাল যত ঘনিয়ে আসছে কিয়েভের মনোবলে ততটাই চিড় ধরছে। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধে চূড়ান্ত জয় পাওয়ার সম্ভাবনা যেমন রাশিয়ার ক্ষেত্রে প্রবল হচ্ছে তেমনি ২০২৪ এর নির্বাচনে আবারও ক্ষমতায় আসার বিষয়টিকেও জোরদার করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও এই মত। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য হিল এ খবর জানিয়েছে।
শুক্রবার রুশ সেনাদের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে পুতিন বলেন, আমার এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে আমরা অবশ্যই নিজেদের জন্য নির্ধারিত সমস্ত লক্ষ্য অর্জন করব। উল্লেখ্য ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন পুতিন। ২০২৪ সালে ১৭ মার্চ রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
গত কয়েক মাসে ইউক্রেনের গ্রীষ্মকালীন পালটা আক্রমণ ধীর গতি ধারণ করায় উত্তরপূর্ব লুহানস্ক অঞ্চল এবং পূর্ব ডোনেটস্কে দ্বিমুখী রুশ আক্রমণ বেড়েছে। সম্প্রতি আভদিভকা শহরের চর্তুদিক থেকে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া।
সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান পলিসি অ্যানালাইসিসের (সিইপিএ) ফেলো ফেদেরিকো বোরসারি বলেছেন, ইউক্রেনের সম্পদ শেষ করার জন্য ইউক্রেনের উপর ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করতে চাইছে মস্কো। তবে এই ইস্যুতে রাশিয়াকে খুব বেশি কৃতিত্ব দেওয়ার বিরোধী তিনি।
বোরসারি বলেন, দুই দেশের যুদ্ধ এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের কৌশলগত ফলাফল অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু একই সময়ে রাশিয়া গত দুই বছরে আমরা যে ব্যর্থতা দেখেছি তা কিছুটা প্রতিরোধ হয়েছে।
বোরসারি বলেন, রাশিয়া এখন আরও সূক্ষ্ম শক্তি ও কৌশল অবলম্বন করতে পারে, এর অন্যতম উদাহরণ হতে পারে ইউক্রেনে পশ্চিমা সমর্থন দুর্বল করা।
এদিকে যুদ্ধ চলাকালীন সেনাবাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়েছেন পুতিন। রুশ সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে সম্প্রতি ১ লাখ ৭০ হাজার সেনা বাড়িয়েছেন পুতিন। শুধু তাই না, আগামী তিন বছরের জন্য রাশিয়ান সামরিক বাজেট ২৫ শতাংশ বাড়ানোর জন্য সম্মত হয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সংস্থা বিকন গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইকেল অ্যালেন বলেছেন, পুতিন এখন ভালো অবস্থানে আছেন। তার দখলে এখন অনেক এলাকা। তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন এবং আমরা আগের মতোই বিভক্ত বলে মনে হচ্ছে।
নির্বাচনের আর যে কয় মাস বাকি আছে এই সময়ে কোনও আশ্চর্যজনক ফলাফলের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন মাইকেল অ্যালেন। তিনি বলেন এ কয়েক মাসে ইউক্রেন তার প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান ধরে রাখতে পারে, এবং বসন্তে আরেকটি পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করতে পারে। এটি মূলত মার্কিন সমর্থনের উপর নির্ভর করবে, যা বর্তমানে অনেকটা দোদুল্যমান।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো ক্যাথলিন ম্যাকইনিস বলেছেন, পরবর্তী অপারেশনের আগে ইউক্রেনের আরও আর্টিলারি এবং ডিমাইনিং সরঞ্জাম সংগ্রহ করা দরকার। তবে তা দিয়েও রাশিয়ার মতো সেনাবাহিনীকে মোকেবেলা করা কঠিন হবে।
ম্যাকইনিস আরও বলেন, ইউক্রেনের তাদের আক্রমণের কৌশলটি পুনর্মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ গ্রীষ্মের পালটা আক্রমণে দেশটির সেনারা রুশ গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পয়েন্টে লড়াই করেছিল। সেক্ষেত্রে রাশিয়ার দুর্বলতা খুঁজে বের করে সেই অনুযায়ী কাজে পদক্ষেপ নিলে তা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন তার সেনাবাহিনী পালটা আক্রমণের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারেনি। এর কারণ তিনি দেখিয়েছেন প্রয়োজনীয় অস্ত্রের অভাব। তিনি বলেন, আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি না। “আমরা আমাদের কর্মে আত্মবিশ্বাসী
বিশ্লেষকরা বলেছেন, কয়েকটি কারণে পালটা আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছে। একটি হলো বিশাল রাশিয়ান সেনাবাহিনী, ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীতে দক্ষ কর্মীর অভাব এবং বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় অস্ত্রের ধীরগতির সরবরাহ।
এদিকে যুদ্ধ অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার পরেও দুইটি ফন্টে ইউক্রেনীয় সেনাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
প্রায় দুই বছরের যুদ্ধের পর, ইউক্রেন বিশাল চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করছে ঠিক তখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যতটা সম্ভব ভূখণ্ড ধরে রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত। সেইসঙ্গে ইউক্রেনে তহবিল সরবরাহ যে মার্কিন সিনেট আটকে দিয়েছে সেই পরিস্থিতিকে ধরে রাখার প্রবল চেষ্টা করছেন পুতিন।
আপনার মতামত লিখুন :