আশ্রয় ডেস্ক
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ৫২তম বিজয় দিবস পালন করলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখা। এ উপলক্ষে শনিবার সকাল থেকে সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতর কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ছিল বিভিন্ন আয়োজন। বিজয় দিবসের দিন বিশেষ অতিথি হয়ে ফোর্ট উইলিয়ামে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিজন মিলিয়ে ৭১ জনের একটি প্রতিনিধি দল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখার শীর্ষ কর্মকর্তারাও।
সকালে ফোর্ট উইলিয়ামের মূল ফটকের কাছে অবস্থিত বিজয় স্মারক স্মৃতিস্তম্ভে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন এয়ার ভাইস মার্শাল রাহুল ভাসিন, ন্যাভাল অফিসার-ইন-চার্জ (পশ্চিমবঙ্গ) পি সশী কুমার, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল (আইপিএস), ভারতের বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল (অব.) অরূপ রাহা, ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শংকর রায় চৌধুরী প্রমুখ। এরপর সেনাবাহিনীর মাঠে আয়োজিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্বলিত একটি প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি দলটি। সেদিনকার সেই স্মৃতিবিজড়িত দৃশ্য দেখে অনেকেই আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন।
পরে সংবাদমাধ্যম কর্মীদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় সেনাপ্রধান বলেছেন, ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর কীভাবে এই সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা আপনারা সবাই জানেন। এরপর ১৪ দিন ধরে সেই সর্বাত্মক যুদ্ধ চলেছিল এবং তাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সর্বতোভাবে সহায়তা দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধারা। এই যুদ্ধে প্রায় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে। এই যুদ্ধে জয়ের ফলে কেবল বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মই নেয়নি বরং দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন করেছে। এটাও সবারই জানা যে ১৯৭১ এর যুদ্ধে একদম সামনের সারিতে ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী, আর সেই কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইতিহাসে বিজয় দিবস একটা আলাদা গর্বের জায়গা করে নিয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে শুধু ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক যোগসূত্রই নয়, আমার মনে হয় বাংলাদেশ নামক একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম প্রক্রিয়া এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার মধ্যে মানসিক যোগসূত্র রয়েছে। আর সেই কারণে আমরা সেই বন্ধন ও বন্ধুত্ব শেয়ার করি। একাত্তরের যুদ্ধের পর যেহেতু দুটি দেশ আলাদা আলাদাভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবে উন্নতি করে চলেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় একটি অন্যতম বড় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ও ভারত- উভয়ই তাদের নিজেদের মতো করে প্রবৃদ্ধির গতিপথ অনুসরণ করছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে। যদিও এই সম্পর্কের মধ্যে উত্থান-পতন রয়েছে, সেগুলো আমরা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।
বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে বিজয় দিবসের দুই দিনব্যাপী আয়োজন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন দুই দিনব্যাপী মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হচ্ছে।
শনিবার সকালে কলকাতা উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য ‘মুজিব চিরঞ্জীব’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এছাড়া কলকাতায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেড-এর কর্মকর্তা/কর্মচারীরাও বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। কাউন্সিলর (শিক্ষা ও ক্রীড়া) রিয়াজুল ইসলাম রাষ্ট্রপতি, কাউন্সিলর (কনস্যুলার) এএসএম আলমাস হোসেন প্রধানমন্ত্রী, কাউন্সিলর (রাজনৈতিক) তুষিতা চাকমা পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং দ্বিতীয় সচিব (রাজনৈতিক) শেখ মারেফাত তারিকুল ইসলাম পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করেন। এরপর অনুষ্ঠানের সভাপতি উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস-এর বক্তব্যের মাধ্যমে সকালের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
দ্বিতীয় ধাপে বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের কৃষি ও পরিষদ-বিষয়ক মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ১৯৭১ সালের স্মৃতিচারণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক।
উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস সমাপনী বক্তব্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার স্থপতি, বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য সহায়তার জন্য ভারতের, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। বাংলাদেশ-ভারতের গভীর বন্ধুত্বের প্রসঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশ এবং ভারত একসঙ্গে এগিয়ে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :