রাজধানীতে অনুষ্ঠিত আজ এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মজুরি বোর্ড গঠনে মালিক-শ্রমিক সমতাকে বিবেচনায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা বলেন, বোর্ড গঠনে মালিক-শ্রমিক সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে জীবন ধারনের মতো মজুরি নির্ধারণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
আজ রোববার রাজধানীর একটি সম্মেলন কেন্দ্রে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ এবং করণীয় বিষয়ে এই গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা বলেন, ৪২টি নিম্নতম মজুরী বোর্ডের সঙ্গে আরো ১৪টি সেক্টর যুক্ত হওয়ায় জাতীয় ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়ার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমানে মোট ৫৬ টি সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করা সম্ভব হবে বলে তারা উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)-এর উদ্যোগে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে গোল টেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিম্নতম মজুরী বোর্ডের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ।
বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিলসের মহাসচিব নজরুল ইসলাম খান এবং সূচনা বক্তব্য রাখেন শ্রম অধিকার কমিশনের প্রধান ও বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শ্রম অধিপ্তরের মহাপরিচালক এনামুল হক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইন কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ, আইএলও’র প্রকল্প কর্মকর্তা নিরান রামজুঠান প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিলস নির্বাহী পরিষদের সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। ‘বাংলাদেশে নিম্নতম মজুরি : প্রয়োগ ও কার্যকারিতার সন্ধানে ভবিষ্যত করণীয় নির্ধারণ’ বিষয়ে গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজ আহমেদ।
তৈরি পোশাক খাত, চা, ট্যানারি এবং চিংড়িখাতসহ নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ এবং করণীয় বিষয়ে বক্তারা বলেন, শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষার দোহাই দিয়ে ন্যায্য মজুরি থেকে শ্রমিককে বঞ্চিত করা যাবে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মালিক-শ্রমিকের অংশগ্রহণের সমতাকে বিবেচনায় রেখে জীবন ধারনের মতো মজুরি নির্ধারণ করতে হবে।
তারা বলেন, শ্রমিককে বঞ্চিত করার মনোভাব কাটিয়ে তাদের জীবনমান ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, বাজার পরিস্থিতি, মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি বিবেচনায় রাখতে হবে। ঠিকাদারী ব্যবস্থার কারণে মজুরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শ্রমিকের যে হয়রানি হয় তার অবসান ঘটাতে হবে।
তারা বলেন, সমীক্ষার মাধ্যমে শ্রমিকদের চাহিদা নিরূপণ করে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডকে মজুরি নির্ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা মজুরি বোর্ড পর্যবেক্ষণ করলে সেটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া মজুরি বোর্ডকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
বক্তারা বলেন, প্রতি ৫ বছর পর পর মজুরি বোর্ড গঠন না করে বরং তা প্রতি ৩ বছর পর পর গঠন করলে সেটি সময়োপযোগী ও অধিক কার্যকরী হবে। এবং এতে শ্রমিক অসন্তোষ ও শ্রমবিরোধ কমবে।
তারা বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্য ও বাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে পুর্বের মজুরিতে জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। মজুরি নির্ধারণে এ বিষয়টি জোরালোভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। এ ছাড়া বোর্ডের মানসম্পন্ন পরিচালনা পদ্ধতিও নির্ধারণ করা দরকার এবং সেক্টরের সংখ্যা সর্বোচ্চ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ, মালিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, গবেষক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গবেষণায় দেখা যায়, মজুরি বোর্ড গঠনের পর ৬ মাসের মধ্যে মজুরির ঘোষণা আসার কথা থাকলেও এ ক্ষেত্রে দ্বিগুণ বা তিনগুণ সময় কিংবা তারও বেশী সময় লেগে যায়। এ ক্ষেত্রে বোর্ডের সদস্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কি ধরনের নীতি রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়।
গবেষণায় যে বিষয়গুলো সুপারিশ করা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, বোর্ডের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সদস্যদের যোগ্যতা ও তাদের ভূমিকা নির্ধারণ, মজুরি হিসাবের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য মান নির্ধারণ ও সরকারের সদিচ্ছা।
আপনার মতামত লিখুন :