স্বাধীন ফিল্ম কমিশন গঠনের দাবি তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের


assroy প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৪, ৫:৫৩ অপরাহ্ন /
স্বাধীন ফিল্ম কমিশন গঠনের দাবি তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের

চলচ্চিত্র নির্মাতারা একটি স্বাধীন ফিল্ম কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা স্বাধীনভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই, যেখানে সাধারণ মানুষের কথা উঠে আসবে।’ সাংস্কৃতিক রাজনীতির মাধ্যমে শিল্পী সমাজ আর স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার তৈরি করা কাঁচের ঘরে বন্দি থাকবে না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।
২০২৪-এর ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান পর্যালোচনা প্লাটফর্ম ‘জুলাই গণপরিসর’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে ‘কালাচারাল পলিটিক্স: উছিলা সিনেমা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতারা এসব কথা বলেন।
আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এই সময়োচিত উন্মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বিষয়ভিত্তিক আলোচনার সূত্রধরের ভূমিকা পালন করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন। একে একে নয় জন তরুণ নির্মাতা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। তারা তাদের পূর্বসূরিদের অনেকের অপরাজনীতির কথা উল্লেখ করে তাদের আত্মসমালোচনা করেন। শেষে দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর পর্ব চলে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছিল, একটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, আরেকটি ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে। আর গত ১৫ বছরে কালচারাল পলিটিক্সের সম্মুখ ভাগে ছিল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। ৭১’এর চেতনা বনাম মৌলবাদ। শিল্পী সমাজ কাঁচের ঘরে বন্দি ছিলেন। তারা একটা ফ্রাংকেনস্টাইন স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের সৃষ্টি করেছিলেন। তার দায়ভার কি শিল্পী সমাজের ওপর বর্তায় না? প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে গত এক দশকে একটিও সিনেমা তৈরি হয়নি যা মানুষের কথা বলে, সমাজের কথা বলে। জাতি হিসেবে আমরা একটা ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। আজকের কালচারাল পলিটিক্সের ওপর নির্ভর করেই তৈরি হবে আগামীর কালচার।
সুমন রহমান বলেন, গত ১৫ বছর আমরা চোরাগুপ্তাভাবে ছিলাম। চলচ্চিত্র শিল্পটা ফ্যাসিজমের কাছে হারিয়ে গিয়েছিল। একটা শ্রেণী তাদের দাসত্বের দায় মিটিয়েছেন ফ্যাসিবাদকে সহযোগিতা করে। আর ২০২৪ সালে এসে আমরা যারা গণ-অভ্যূত্থানে ছিলাম, আমরা আমাদের রাজনৈতিক দায় পরিশোধ করেছি।
‘মুজিব’ সিনেমার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মুজিব পরিবারের হত্যাকা-ে সময় স্কুলের ছেলে-মেয়েরা হাততালি দেয়, তখন বোঝা যায় কতটা কালচারাল পলিটিক্স ও দাসত্ব তারা করেছেন। যারা এই অঢেল বাজেটের সিনেমা বানিয়েছেন, তাদের পতন হয়েছে।;
তিনি সরকারের কাছে ‘আয়নাঘর’ নামে সিনেমা বানানোর জোর দাবি জানান।
অং রাখাইন বলেন, ‘সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে চলচ্চিত্র। রাষ্ট্রের সিস্টেম নিয়ে আমাদের ক্ষোভ আছে। আমি এখনও আশাবাদী না।’
তিনি বলেন, চলচ্চিত্র নির্মাতারা হচ্ছে সংখ্যালঘু। গত ১৫-২০ বছরে দেশে ভালো কোন সিনেমা তৈরি হয়নি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। আমি কোন আশা দেখছি না।
তিনি পার্বত্য এলাকার নানা সমস্যার কথাও এসময় তুলে ধরেন।
তাসমিয়াহ আফরিন মৌ বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার ফিল্মের প্রতিটি জায়গায়, ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকে চাপিয়ে দিয়েছে। আর ১১ বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফিল্মমেকার হিসেবে কাজ করেছে, যা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট হিসেবে গড়ে উঠেছিল। আওয়ামী লীগ শাসনামলে তাদের বয়ানের বাইরে ভালো কাজ করার কোন সুযোগ ছিল না। সিনেমা নির্মাতাদের একটি অংশ ওটিটি মাধ্যমে চলে গিয়েছিল। গুমের মতো ঘটনাকে তারা হাসির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। স্বৈরাচার সরকার কালাচারাল পলিটিক্সকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে, সিন্ডিকেটের বাইরে কিছু করা যায়নি।
তিনি বলেন, এখন কোন সেন্সর বোর্ড চাই না, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা চাই না।
সাজেদুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে ভালো সিনেমা তৈরির সুযোগ দেয়া হয়নি। সে সময় মেধার কোনো মূল্যায়ন ছিল না। কালাচারাল পলিটিক্সের নামে ধর্মের সাথে দ্বন্দ্ব তৈরি করা হয়েছিল। আমরা এখন স্বাধীন ফিল্ম কমিশন চাই। সকল ধরনের সিনেমা তৈরির মুক্ত পথ চাই। মুক্তভাবে সিনেমা তৈরির পরিবেশ চাই।
লাবনী আশরাফি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সমালোচনা করে বলেন, তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তার নির্মিত সিনেমার একটি অংশে সাজগোজ দেখবেন না বলে, সিনেমার ওই অংশটি কেটে ফেলতে বলা হয়। যা ছিল খুবই দুঃখজনক।
আমাদের কালচারকে ফ্যাসিস্টদের বলয়মুক্ত করতে হবে উল্লেথ করে কক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, অপরাজনীতি বা অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে শিল্পীরা যদি কথা বলতে না পারেন তবে কিসের শিল্পী হলাম আমরা?
মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম বলেন, ‘রাষ্ট্র সব সময় তার নিজের চেহারা দেখতে ভয় পায় কেন? আমাদেরকে স্বাধীনভাবে সিনেমা বানাতে দিতে হবে। আমরা আর চোর-পুলিশ খেলা দেখতে চাই না।
তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি-ঘর ভাংচুরের বিচার দাবি করে বলেন, যারা এটা করেছে সরকারকে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাঁর ভিটা ফেরত দিতে হবে।
জাহিন ফারুক আমিন বলেন, কালাচারাল পলিটিক্সের মাধ্যমে সেক্যুলার বনাম মুসলিম দ্বন্দ্ব বাঁধিয়ে রেখেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিজমকে আমরা রক্ত দিয়ে বিদায় করেছি। এখন স্বাধীনভাবে সাধারণ মানুষের অভিপ্রায় সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে।
নূরুল আমিন আতিক বলেন, সিনেমায় সাধারণকে ঠেলে অসাধারণকে তুলে ধরা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ, স্বাধীনতার ৫০ বছর, মুক্তিযুদ্ধ আর উন্নয়নের গীত গাইতে গাইতে জনগণকে শত্রুতে পরিণত করেছিল আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার। ২৪-এ এসেও আমাদের সন্তানদের প্রাণ কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলো তারা। তিনি নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যতদিন দেশ তাদের হাত ধরে হাঁটবে ততদিন সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আ-আল মামুন বলেন, ২৪-এর আন্দোলনে সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে। অথচ গত ১৫ বছরেও ফ্যাসিস্ট সরকার মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখতে পেলো না। ছাত্র-জনতার এতো এতো লাশ তারা চোখে দেখলো না।