প্রয়াত এরশাদের উত্তরাধিকারী ও রংপুর-৩ আসনের এমপি রাহগীর আল মাহী সাদকে মেনে নিতে পারছে না স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতারা। এরশাদের মৃত্যুর পর তার ছেলে এবং বিরোধী দলীয় নেতা রওশনকে কেন বিতর্কিত করা হচ্ছে—এ প্রশ্ন দলের একটি পক্ষ তুললেও স্থানীয় নেতারা বিষয়টিতে নীরব। যদিও স্থানীয় অধিকাংশ নেতাকর্মীর অভিযোগ, যারা দীর্ঘদিন এরশাদ পরিবারকে ভালোবেসে সুখে দুঃখে পাশে ছিলেন, তাদের বাদ দিয়ে সাদ সুবিধাবাদী গ্রুপ তৈরি করেছেন। এ অভিযোগে সাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় নেতারা একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছেন।
সম্প্রতি তার বাড়িতে হামলার ঘটনায় এক নেতাকে পুলিশে দেওয়ায় নগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা সাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই। ফলে এরশাদপুত্রকে নিয়ে নতুন ‘বিরোধ’ দেখা দিয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতির গড়া দলটিতে।
দলীয় সূত্র জানায়, সাদকে রংপুরের রাজনীতিতে পোক্ত হতে দিতে চান না শহরের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা। তারপরও সাদ নিজের মতো করে একটি বলয় তৈরি করে রংপুরে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে সাদকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই নানা ফন্দিফিকির করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির রওশনপন্থি এক নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, করোনাকালীন কিছু নিম্ন আয়ের মানুষ দিয়ে স্থানীয় নেতারা পল্লী নিবাস অবরোধ করান দুইবার। এ অবরোধের পরই সাদ প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী নিয়ে দুই মাস থেকে এলাকায় অবস্থা করছেন এবং স্থানীয়দের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছেন। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে নগর ২৭নং ওয়ার্ড সভাপতির একটি ডিও লেটারে স্বাক্ষর না করাকে কেন্দ্র পল্লী নিবাসে হামলা করেন ওয়ার্ড সভাপতি টিপু সুলতান। যদিও এ ঘটনার পেছনে টিপু সুলতান একা নয় বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে, টিপু সুলতানকে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে গত বুধবার সেন্ট্রাল রোডের দলীয় কার্যালয়ে জরুরি সভা করেছে মহানগর জাতীয় পার্টি। সভা শেষে টিপু সুলতানকে নিঃশর্ত মুক্তি, সুষ্ঠু তদন্তসহ দোষীদের গ্রেফতারে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় জাতীয় পার্টি নেতারা। এই সময়ের মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার করা না হলে বিক্ষোভসহ বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, অপরাধ কেউ করে অপরাধকে ধামা-চাপা দেয়ওার জন্য ঘটনা তৈরি করে। টিপু সুলতানের বয়স ৬২ বছর। তার চুল-দাড়ি পাকা। তিনি কিভাবে এমপির স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সমস্যা হলে আমরা বসে মীমাংসা করতাম। কিন্তু এমপি নেতাকর্মীদের হেনস্তা করবেন, পুলিশে দেবেন তা মেনে নেওয়া যায় না।
এ বিষয়ে সাদ জানান, ডিও লেটার না দেওয়ায় টিপু সুলতান তার দিকে তেড়ে আসেন। বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর অস্ত্র নিয়ে পল্লী নিবাসে হামলা করতে আসেন। তাই তাকে ধরে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। সাদের দাবি, তিনি করোনাজনিত পরিস্থিতিতে তিন মাস ধরে এলাকায় থেকে কাজ করছেন। জনগণের পাশে রয়েছেন। জাতীয় পার্টির সাধারণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে রয়েছেন। এজন্য দলের অনেকেরই তা পছন্দ হচ্ছে না। যারা রংপুরে তার উপস্থিতি পছন্দ করেন না তারাই হামলা করিয়েছেন। ঘটনাটি জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে জানানো হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবস্থা নেওয়ার।
এ বিষয়ে দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, একেবারে তৃণমূলের পুরোনো নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। চাইলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। আগে পরিস্থিতি শান্ত হোক।
এ হামলার ঘটনার পর জাতীয় পার্টিতে আবারো পুরোনো বিরোধ সামনে আসছে বলে অনেকেই মনে করছেন। রাহগীর আল মাহী সাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের অনুসারীরা। তাদের অভিযোগ, রংপুরে এরশাদ পরিবারের কাউকে রাজনীতি করতে দিতে চান না জি এম কাদের। তাই এমপি সাদের ওপর হামলার পরও নীরব রয়েছেন তিনি। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জি এম কাদেরের বক্তব্য জানা যায়নি।
রওশনপন্থিরা বলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের যদি কথায় কথায় বহিষ্কার করা হয় তাহলে ওয়ার্ডের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এত দেরি কেন? সাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গত শনিবার কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে একই প্রশ্ন তোলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু। প্রতিবাদ সমাবেশে শফিকুল ইসলাম ছাড়া উপস্থিত অন্য নেতাদের কারো দলীয় পদ নেই। এরশাদের জীবদ্দশায় তারা গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও গত জানুয়ারিতে নতুন কমিটি গঠনের সময় তাদের বাদ দেন জি এম কাদের।
আপনার মতামত লিখুন :