শীতে আসার সঙ্গে, যাও উত্তরবঙ্গে


Assroy প্রকাশের সময় : নভেম্বর ৩, ২০২৩, ১২:৪৫ অপরাহ্ন /
শীতে আসার সঙ্গে, যাও উত্তরবঙ্গে

আরো শীত চুয়ে পড়ুক গাছের পাতার তলায়–অনুপম রায়ের  গানের এই লাইনটি শীতের সঙ্গে এতটাই সঙ্গতিপূর্ণ যে অতিরিক্ত কিছু বলার নেই। হাড়-কাঁপানো শীত নিয়ে উচ্ছ্বাসের কিছু নেই। তারপরও শীতেই ভ্রমণের পরিকল্পনা সবার থাকে বেশি। সুন্দর একটি ভ্রমণের মাধ্যমে নিজের মনকে সুন্দর করে সাজানোর সুযোগ থাকে। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় বছরের এই সময়ে থাকে যন্ত্রণা বেশি। উত্তরবঙ্গের কিছু জেলায় প্রতিবছর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন তখন থাকে শঙ্কা ও দুর্ভোগে। ত্রাণ ও সাহায্য বিতরণের কাজও হয়। সে পরিস্থিতিও তো চোখে দেখতে হবে। সেটি কিভাবে? শীত আসার সঙ্গে, চলে যাবেন উত্তরবঙ্গে। সেটিই বেশ ভালো মতো। উত্তরবঙ্গে ঘুরতে গেলেও বা দেখবেন কি? সেটি জানাচ্ছি। মনোযোগ দিয়ে পড়ুন তবে। 

রাজশাহী
উত্তরবঙ্গের কাছাকাছি শহরটির কথা বললে রাজশাহীর নাম আসবে। ক্লিন সিটি বলে পরিচিত রাজশাহীতে প্রবেশ করার পরই ভালো লাগবে আপনার। এই শহরের নির্মল বাতাস আপনায় আনন্দিত করতে বাধ্য। মাথায় একটিই নিশানা রাখা, শীতের রাতে পদ্মার পার দেখা। কোনোমতে দিনে পৌঁছালেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে হবে। 

ক্যাম্পাস বাদেও এখানে দেখার জায়গার অভাব নেই। ঐতিহাসিক বাঘা মসজিদ, পুঠিয়া রাজবাড়ি, ইতিহাস সমৃদ্ধ নানা মন্দির। আরো আছে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, শিশুপার্ক, হাওয়াখানা, চিড়িয়াখানা প্রভৃতি ভ্রমণকেন্দ্রও রয়েছে শহরে। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিল্কের মার্কেটও অনেক পর্যটকের প্রিয় গন্তব্য। রাজশাহীকে গন্তব্য হিসেবে বাছাই করার বড় কারণ যোগাযোগমাধ্যম। এই শহরে ট্রেনে যাতায়াত সবচেয়ে আরামের। থাকার জায়গা নিয়েও দুশ্চিন্তার কারণ নেই। অনেক জায়গা রয়েছে। শহরও গোছালো। শীতের সময় অবকাঠামো ও প্রকৃতির সমন্বয়ে অন্য এক রূপ নেয় রাজশাহী। 

কুড়িগ্রাম
কাঁপুনি টের পাবেন উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রামে গেলে। নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি, চান্দামারী মসজিদ, ভেতরবন্দ জমিদার বাড়ি, উলিপুর মুন্সিবাড়ী, বঙ্গ সোনাহাট ব্রিজ দেখবেন কাঁপতে কাঁপতে। তবে আস্থা রাখুন। এই ভ্রমণ হবে রোমাঞ্চকর। যাতায়াতের পথটাও সহজ। শীত এলেই তার আমেজ ভালোভাবে টের পাবেন উত্তরবঙ্গে। নগরজীবনের ক্লান্তি যখন আপনায় ঠেলে দিবে আরো অসহায় অবস্থায়। ঘুরে আসুন উত্তরবঙ্গের এই জনপ্রিয় জেলাগুলোতে। শীতের প্রস্তুতি রাখুন। সুস্থ থাকুন।

2 (1)

কুষ্টিয়া
লালন ফকিরের স্মৃতি কুষ্টিয়া জেলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। শীতের সময় লালনের আখড়া নতুন রূপে সাজানো হয়। সেটাও উৎসবের ছোঁয়া নিয়ে। শহরে গেলেই প্রথমে খেঁজুরের রস দিয়ে স্বাগত হবেন আপনি। রস একেবারে টাটকা। টাটকা রস খেয়েই চলে যাবেন লালনের আখড়ায়। 
কুষ্টিয়ায় লালনের আখড়াতেই বিশাল সময় কেটে যাবে। তবে এখানে ভ্রমণ শেষে আপনি আরো কয়েকটি জায়গায় যেতে পারেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও জাদুঘর, ঠাকুর লজ, মীর মোশারফ হোসেনের বাস্তুভিটা, লালন শাহ সেতু, ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ, জিউর মন্দিরের মতো ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলো তো রয়েছেই। কুষ্টিয়াতে যাতায়াতও বেশ সহজ। আবাসন সংকটও এখানে নেই। নিরাপদেই ভ্রমণ করতে পারবেন। 

পঞ্চগড়
উত্তরবঙ্গের এই জেলাকে ‘হিমালয় কন্যা’ বলে অভিহিত করা হয়। নামটি শুনলেই স্পষ্ট বোঝা যায়, হিমালয় এখান থেকে অনেক কাছে। হিমালয়ের ছোঁয়া রয়েছে যে জেলায় সে জেলার আকর্ষণও সঙ্গত কারণেই বেশি। প্রতিবছরই পর্যটকরা শীতে এখানে এসে ভিড় জমায়। বছরের শুরুতেই অনেকের পরিকল্পনা থাকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার।

আবহাওয়া ও আকাশের অবস্থা অনুকূলে থাকলে তেতুলিয়া থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভারতের কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলে মহানন্দার পাড়ে থেকেই। বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, সমতলে বিস্তৃত চা বাগান, গোলকধাম মন্দির, বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির, বার আউলিয়া মাজার, ভিতরগড় দুর্গ নগরী, মহারাজার দীঘি, মির্জাপুর শাহী মসজিদসহ নানা ঐতিহাসিক স্থাপনা পঞ্চগড়ে ভ্রমণের অন্যতম গন্তব্য।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে আছে বাংলাদেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর। ব্যতিক্রমী এই জাদুঘরে বিভিন্ন বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের নানা বয়সী পাথর , বিভিন্ন আদিবাসীদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র , পোড়ামাটির নানা মূর্তিসহ নানা অভিনব নিদর্শন। পঞ্চগড়েও রেলপথেই চমৎকারভাবে যাতায়াত করা যায়। যাত্রাপথও আরামদায়ক। বাসেও যেতে পারেন। তবে রেলপথটিই বেশি আরামদায়ক। 
পঞ্চগড়ে থাকার জন্য তেতুলিয়ার ডাকবাংলো বেশ জনপ্রিয় জায়গা। মহানন্দার কোলে ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা এই ঐতিহাসিক ডাকবাংলোর পাশেই রয়েছে পিকনিক স্পট। সেজন্য থাকা নিয়ে দুশ্চিন্তা সচরাচর কারো থাকে না। পঞ্চগড় সার্কিট হাউজসহ বিভিন্ন সরকারি রেস্ট হাউজ আছে পঞ্চগড় শহরেই। বেসরকারি বিভিন্ন হোটেলেও থাকার সুব্যবস্থা আছে।  

দিনাজপুর
স্থাপত্য নিদর্শনের প্রতি যাদের আগ্রহ অনেক তাদের জন্য দিনাজপুরের চেয়ে ভালো গন্তব্য আর হয় না। উত্তরবঙ্গে শীতে স্থাপত্য আর শীতের মিশেলটাও চমৎকার। দিনাজপুর রাজবাড়ী, কান্তজির মন্দির, নয়াবাদ মসজিদ, দীপশিখা আনন্দালয় ও মেটি স্কুল অন্যতম। এছাড়াও রামসাগর দীঘি, সুখসাগর ইকোপার্ক, স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট, লিচুবাগানের মতো ভ্রমণকেন্দ্রও রয়েছে দিনাজপুরে। তাছাড়া এখানেই রয়েছে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। দিনাজপুর শহরটাও সুন্দর। শীতের সময়ে প্রস্তুতিও এই শহরের বেশ। 

4 (1)

রংপুর
দিনাজপুর গেলেই রংপুর যেতে লাগে এক ঘণ্টার মতো। তাই সুযোগটা হাতছাড়া করার মানে নেই। শীতে ভাওয়াইয়া গানের দেশ রংপুরে বেড়াতে গিয়ে দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ি, পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়ার বাড়ি, লালদিঘি নিয় গম্বুজ মসজিদ, তাজহাট জমিদার বাড়ি, প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক, ভিন্নজগত পার্কসহ নানা জায়গায় ঘুরতে পারবেন সমস্যা ছাড়া। তাই সুযোগ হাতছাড়া করবেন কেন?
বাসে যাতায়াত করলে একটু সমস্যা হতেই পারে। তবে সমস্যা এত জটিল হবে না। ঘুরে আসুন রংপুরেও।  

ঠাকুরগাঁও
শীতে উত্তরবঙ্গের প্রসঙ্গ এলেই ঠাকুরগাঁ আসবে তালিকায়। জগদল রাজবাড়ি, হরিপুর রাজবাড়ি, জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ, বালিয়া মসজিদ, হরিণমারী শিব মন্দির, রাজা টংকনাথের রাজবাড়িসহ নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন ঠাকুরগাঁও জেলার প্রধান আকর্ষণ।
শান্ত এই জেলার মনোরম পরিবেশ শীতে অদ্ভুত ও অলৌকিক রূপ নেয়। শ্রমজীবী মানুষ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনজীবনের লোকজ সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে আকচা গ্রামে গড়ে উঠেছে লোকায়ন জীবন বৈচিত্র্য জাদুঘর। ব্যতিক্রমধর্মী এই জাদুঘরে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত কৃষি ও লোকজ ঐতিহ্যের নানা নিদর্শন সাজানো রয়েছে। সেটাও আপনার দিনকে রাঙিয়ে দিতে পারে।