প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি।
আজ শনিবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সংলাপের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের একথা জানান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার সাথে সংলাপে আমরা একটা রোড ম্যাপ দিতে বলেছি। নির্বাচন কমিশন কবে নির্বাচন করবে সে ব্যাপারে একটা রোড ম্যাপ দিতে বলেছি।’
বেলা আড়াইটা থেকে এক ঘণ্টা বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল হেয়ার রোডে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপে প্রথম দল হিসেবে বিএনপি শনিবার যোগ দেয়। একঘণ্টা বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংলাপে বসেন। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান দলটির নেতৃত্বে দেন।
মির্জা ফখরুল সংলাপের আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা, এনআইডি কার্ড যেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যাস্ত করতে আইন করা হয়েছিলো, সেটাকে অডিন্যান্স জারির মাধ্যমে বাতিল করতে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যাতে নির্বাচন সংস্কার কমিশনে না যায়, আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে সেকথা বলেছি। আমরা বলেছি যে, ফ্যাসিস্ট সরকারের ভুয়া ভোটে নির্বাচিত সকল ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করতে বলেছি। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যেসব প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশনারগণ ছিলো তাদেরকে ভুয়া ও ব্যর্থ নির্বাচন, পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন করার অভিযোগে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার কথা বলেছি।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উনি (প্রধান উপদেষ্টা) আমাদেরকে বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান উনাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার।’
বিএনপির দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলো অত্যন্ত সহযোগিতার সঙ্গে তারা দেখছেন। তারা মনে করেন আমাদের দাবিগুলো জনগণের দাবি, আমাদের দাবিগুলো তাদেরও দাবি।’
ছয় সদস্যের বিএনপির প্রতিনিধি দলের ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে সংবিধান ধ্বংস ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের ‘মূল হোতা’ অভিহিত করে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবির কথা জানিয়েছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
প্রশাসনে ফ্যাসিবাদের অনেক দোসর এখনও কর্মরত আছেন জানিয়ে তাদের অপসারণ, জেলা প্রশাসক নিয়োগে নতুন ফিট লিস্ট এবং যেসব জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের নিয়োগ বাতিল, ফ্যাসিবাদের সময়ের চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিলের কথা বলেছেন বলে জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আমরা গত ১৫ বছর ধরে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে পদোন্নতি বঞ্চিতদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য বলে এসেছি।’
বিচার বিভাগের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ‘আামরা বলেছি যে, বিচার বিভাগের হাইকোর্ট বিভাগে এখন পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন হয়নি। হাইকোর্ট বিভাগে বেশির ভাগ নিয়োগই ছিলো দলীয় ভিত্তিতে এবং প্রায় ৩০ জন বিচারক বহাল তবিয়তে কাজ করছেন এখনো। এদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি।’
তিনি আরো বলেন,‘দলকানা কিছু বিচারক আছেন তাদের অপসারণের কথা বলেছি। একই সঙ্গে অতিদ্রুত পিপি ও জিপি নতুনভাবে নিয়োগ দেয়ার কথাও সংলাপে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি যে, যাদেরকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হচ্ছে, সেটা দুর্নীতি অথবা হত্যার মতো সুনির্দিষ্ট মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদেরকে দেখতে পারছি যে, জামিন দেয়া হচ্ছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক। এই বিষয়টা আমরা দেখার জন্য বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালে থেকে শেখ হাসিনার শাসনামলে সকল মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা ও প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিভিন্নভাবে শুনতে পাই, কিছুু জায়গায়, সাবেক মন্ত্রীরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। কিভাবে পালিয়ে যাচ্ছে, কার সহযোগিতায় পালাচ্ছে এই বিষয়গুলো দেখার জন্য বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘আজকে পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। ভারতে থেকে তাকে কেন্দ্র করে, তার মাধ্যমে যে সমস্ত ক্যাম্পেইন ও অপপ্রচার চলছে সেই বিষয়গুলো নিয়ে ভারতের সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য এবং তাকে ওই অবস্থা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি, তারা যেন ভারত সরকারের সাথে আলোচনা করে।’
পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতার সৃষ্টি পেছনে কারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গুম-খুনের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের একটি দল বাংলাদেশে এসেছে। সেই দলকে যারা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে সম্পৃক্ত আছেন তারা জাতিসংঘের টিমকে সেইভাবে সহযোগিতা করছে না। বিষয়টি আমরা বলেছি।’
ছাত্র-জনতার প্রবণ গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালানোর পর গত ৭ আগস্ট অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেন। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রধান উপদেষ্টার এটি তৃতীয় দফা সংলাপ।
সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট সংলাপ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মতবিনিময় করেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান।
আপনার মতামত লিখুন :