শিক্ষকদের জবাবদিহিতা ও দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে হবে : শিক্ষা উপদেষ্টা


assroy প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৫, ২০২৪, ৪:৫৮ অপরাহ্ন /
শিক্ষকদের জবাবদিহিতা ও দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে হবে : শিক্ষা উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, সব পেশার মতো শিক্ষকদেরও জবাবদিহিতা ও দায়িত্বজ্ঞানের বিষয় আছে। সেগুলো যথাযথ পালন করতে হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর সচিবালয় সংলগ্ন ওসমানী মিলনায়তনে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, প্রায় সব পেশাতেই নৈতিকতা একটা বড় বিষয়। আপনারা শিক্ষকরা যখন ছাত্রদেরকে শিশুকাল থেকে পড়াবেন, তখন তাদেরকে নৈতিকতা শিক্ষা দেবেন। আমরা ছোটবেলায় ১০/১২টা নৈতিকতা জানতাম। যেমন- সদা সত্য কথা বলবে, মাতা-পিতাকে সম্মান করো ইত্যাদি। এসব চর্চা করতে হবে।
তিনি বলেন, জবাবদিহিতা হল নজরদারির একটা প্রশাসনিক বিষয়। সবার উপর যদি নজরদারি করা হয়, ঠিক সময়ে স্কুলে আসে কিনা, নিয়ম মেনে দায়িত্বপালন করে কি না-এসব নজর রাখা। দায়িত্ববোধ হলো- নৈতিকতার বিষয়। কত আগ্রহ নিয়ে, কত দরদ দিয়ে ছাত্রদের গড়ে তুলবেন, কারো কোন অভাব আছে কি না, কোন ছাত্র কেন নিয়মিত স্কুলে আসছে না এসব খোঁজ নেয়াও নৈতিকতার বিষয়।
‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষকরা অবহেলিত ও উপেক্ষিত এ কথা উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, স্বল্প আয় দিয়ে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকাটাই তাদের পক্ষে দু:সাধ্য। শিক্ষকতায় তারা মনোযোগ দেবেন কোথা থেকে।’
তিনি বলেন, স্বল্প বেতনের শিক্ষকগণ নিজ এলাকা ও পরিবার ছেড়ে দূর-দূরান্তে পেশার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কী দূর্দশায় দিন যাপন করতে হয় তা এককথায় মর্মান্তিক। সরকারি সাহায্যের স্কুলগুলোতে এবং স্কুলগুলোর বাইরে অসংখ্য শিক্ষক আছেন যারা বলতে গেলে বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষকদের এসব সংকট নিরসন একবারেই সম্ভব না হলেও আংশিকভাবে সমাধানের চিন্তা করা যায়।
তিনি বলেন, আমাদের বড় সমস্যা সরকারি রাজস্ব আয় আর্ন্তর্জাতিক মানদন্ডে নিম্নতর পর্যায়ে। যে কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষাখাতে সরকারি ব্যয় অতি কম। তারপরও আমি মনে করি, সরকারি ব্যয়, অপচয় ও দুর্নীতি কমানো গেলে এসব খাতের ব্যয় বাড়ানো সম্ভব হবে। সে চেষ্টা একদিনে হবে না। কিন্তু আমরা শুরু করেছি।
উপদেষ্টা বলেন, ভৌত অবকাঠামোতে বড়-বড় নির্মাণ, যেটা দৃশ্যমান, অনেকক্ষেত্রে তা প্রয়োজন হয়েছে, কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, উন্নত মানবসম্পদ ছাড়া আজ পর্যন্ত কোন দেশ উন্নত দেশের পর্যায়ে যেতে পারেনি।
তিনি বলেন, ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। সমস্যা হলো এখনকার তরুণ প্রজন্ম ছাত্র রাজনীতির নামে চরম অপরাজনীতি, দুর্বৃত্তায়ন এবং দখলদারির রাজনীতির সঙ্গেই শুধু পরিচিত।
ছাত্রজীবনে আমিও রাজনীতি করেছি, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনে ষাটের দশকের শেষের দিকে বিশ্বব্যাপী তরুণ সমাজের একটি নবজাগরণ হয়েছিল। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক যত অব্যবস্থাপনা ছিল সেগুলো বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র আন্দোলনের মুখেই অন্যায্য ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধ করতে আমেরিকা বাধ্য হয়। আমরাও ঢাকা বসে যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধ হোক সে দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমাদের বায়ান্ন, উনসত্তর, নব্বইয়ের ছাত্র আন্দোলনের গৌরবময় ঐতিহ্য আছে। মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রদের বড় অংশগ্রহণ ছিল। সর্বশেষ আমরা এখন ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যূত্থান দেখলাম। এর ফলে অর্ন্তর্বতীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা এবং সেই সঙ্গে মুক্ত চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার স্বাধীনতা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় শিক্ষার্থীরা ভোটার হিসেবে অবশ্যই রাজনীতির অংশ, কিন্তু যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি আচরণবিধি নির্ধারিত থাকে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নিজেদের প্রজ্ঞা দিয়ে এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের নিজস্ব আচরণবিধি তৈরি করতে পারবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, ইউনেস্কো ঢাকার হেড অফিসের ডা. সুশান ভাইজ, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এস এম এ ফায়েজ।
এ সময় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি আইবাস প্লাস প্লাস এর মাধ্যমে ইএফটিতে প্রেরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। পরে গুণী শিক্ষকদের সম্মাননা দেয়া হয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, একজন শিক্ষকের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হলেন তার ছাত্র। আমি আপনাদের দ্বারে-দ্বারে গিয়ে সব শুনছি। এ বিষয়গুলো গ্রহণ করছি। শিক্ষকদের জন্য কি করা যায়, কি করতে পারি তা দেখছি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতিবছর জাতি গঠনে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ দিনটিকে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। ইউনেস্কো নির্ধারিত এ বছরের প্রতিপাদ্য “শিক্ষকের কন্ঠস্বর: শিক্ষায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকার”। এ বছর ১২ জন শিক্ষককে সম্মাননা দেওয়া হয়।