শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি শুরু হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। সাপ্তাহিক ছুটিগুলো যোগ হয়ে এবার টানা চার দিনের ছুটি পেয়েছে কর্মজীবিরা। দীর্ঘ ছুটিতে অবকাশ যাপনের জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার ছুটে আসছেন পর্যটকেরা। ফলে শুক্রবার সকাল থেকে এখানকার সমুদ্রসৈকত ও পর্যটনকেন্দ্রে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে।
হোটেল মালিকেরা জানান, পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও আশপাশের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজে ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটকের জন্য রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
জানা যায়, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে সম্প্রতি পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছিল পর্যটন নগরী। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কক্সবাজারে পর্যটক আসা শুরু হয়।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে হোটেলগুলোতে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েও পর্যটক টানতে পারেনি হোটেল ব্যবসায়ীরা। তবে পর্যটকের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাড়ার ওপর ছাড় প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকে ভরপুর সমুদ্র সৈকত। দীর্ঘদিন নিষ্প্রাণ থাকা সৈকত যেন পুরোনো রূপে ফিরেছে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সৈকতের এই তিন স্পটে অন্তত লক্ষাধিক পর্যটক সমুদ্র্রদর্শনে নেমেছেন বলে জানান জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীদের সুপারভাইজার বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, কক্সবাজারে এখন দেড় লাখেরও বেশি পর্যটক অবস্থান করছেন।
লাবণি পয়েন্টে দুই বছরের ছোট্ট মেয়েকে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের ক্যামেরাবন্দী করছিলেন ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে ভ্রমনে আসা সুমাইয়া ছিদ্দিকা আঁখি। বেসরকারি চাকরিজীবী সুমাইয়া বলেন, কাজের বেশ চাপের মধ্যে সময় কাটছিল। তাই চার দিনের এই ছুটি কক্সবাজারে কাটাতে এসেছি। ’
কুমিল্লা থেকে সপরিবারে এসেছেন ব্যবসায়ী আব্দুল কাদির। তিনি বলেন, ‘লম্বা ছুটি পেলেই পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ছুটে আসি।’
এ ছাড়াও শহরের কলাতলী মোড় থেকে ৮৪ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে ছুটছেন পর্যটকেরা। এ সড়কে দরিয়ানগর পর্যটন পল্লি, হিমছড়ির জাতীয় উদ্যান, ছড়া ও ঝরনা, ইনানী ও পাটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকত ও টেকনাফ রয়েছে। এছাড়া মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামু বৌদ্ধপল্লি, চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে ভিড় করছেন পর্যটকরা।
পরিবহন ব্যবসায়ীরা জানান, আগামী রোববার পর্যন্ত কক্সবাজারে অন্তত ৮ হাজার বাস আসা-যাওয়া করবে। এসব বাসের বেশির ভাগ টিকিটই অগ্রিম বুকিংয়ে রয়েছে। ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিশেষ ট্রেনও চলছে। সেখানেও খালি নেই কোন আসন।
ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বাসস’কে বলেন, ‘শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তারকা ও মাঝারি মানের সব হোটেল-মোটেলের কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। কিছু রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজে কক্ষ খালি থাকলেও আজকের (শুক্রবার) মধ্যে বুকিং হয়ে যাবে বলে আশাকরি। এখানে এসে পর্যটকেরা যাতে ভোগান্তির শিকার না হয়, সে জন্য আমরা অনলাইন বুকিংয়ের প্রতি উৎসাহ দিচ্ছি।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম বাসস’কে বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া গুরুত্বপুর্ন পয়েন্টগুলোতে টহল দলের পাশাপাশি রয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশ। সব মিলিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্পুর্ন প্রস্তুুত ট্যুরিস্ট পুলিশ চলতি মৌসুমে এবারের ছুটিতে সর্বোচ্চ পর্যটক এসেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন,‘পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সৈকতের প্রতিমা বিসর্জন উৎসব শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুুতি সম্পন্ন হয়েছে। পর্যটকদের হয়রানি রোধ ও সেবা নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালতও মাঠে নামানো হয়েছে।’
আপনার মতামত লিখুন :