ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেছেন, মননশীলতা চর্চার প্রধান হাতিয়ার ডিবেটিং। শিক্ষার্থীদের মননশীলতা, ভালো মানসিকতা, মেধার বিকাশ, জ্ঞানার্জন ও তথ্যানুসন্ধানের জন্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতা সহায়ক ভূমিকা রাখে।
আজ শনিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী কবি জসীম উদ্দীন হল মিলনায়তনে বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী এবং সমাপনী অনুষ্ঠান প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। পঞ্চদশ পল্লীকবি আন্ত:ক্লাব বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে কবি জসীম উদ্দীন হল ডিবেটিং ক্লাব।
নিয়াজ আহমদ খান বলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে শুধু পাঠ্যবই পড়াই যথেষ্ট নয়, পাঠ্য বইয়ের বাইরেও শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ড আছে- তার মধ্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতা অন্যতম। এজন্য শিক্ষার্থীদের বিতর্কের চর্চা করতে হবে।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, বিতর্কের যে মূল শিক্ষা সেটা আমাদের গ্রহণ করতে হবে। আমরা বিতর্ক করতে ভলোবাসি, কিন্তু সমাজে আমাদের মতের কাছাকাছি যারা তাদের সাথে চলতে ভালোবাসি। অন্যমতের লোকদের জায়গা দিতে চাইনা। আমরা স্বৈরাচার, ফাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টরা যে ভাবে বিপক্ষের মানুষের কথা কোনভাবেই বিবেচনায় আনতে চাইতো না, সেই একই লজ্জায় যেন নতুন বাংলাদেশে আমাদের পরতে না হয়। নতুন করে ফ্যাসিজমের যেন জন্ম না দেই। নতুন বাংলাদেশে অপরপক্ষ কি ভাবছে সেটা যেন আমরা চিন্তার মধ্যে রাখি। বাংলাদেশে আর কোন ফ্যাসিস্ট শক্তি যেন তৈরি না হয়।
মাহবুব মোর্শেদ আরো বলেন, বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট শাসন আমাদের ওপর চেপে বসেছিল। আমরা দেখেছি তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে কিভাবে একটা ফ্যাসিস্ট চেপে বসেছিল। তারা অন্যপক্ষের কথা শুনতে চাইতোনা। সেই শাসক গোষ্ঠী তাদের বিরুদ্ধ মতামত গ্রাহ্য করতো না। বিরুদ্ধ মতামত চাপা দিয়ে তারা নিজেদের মতটাকে সামনে তুলে ধরে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিত সৃষ্ট করেছিল।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শক্তির হাতে বিগত ১৫ বছরে অসংখ্য প্রাণ ঝড়েছে, অসংখ্যা গুম-খুনের ঘটনা ঘটেছে। সেই সময়ে অনেকেই আহত হয়েছেন। সর্বশেষ দেখেছি হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী, শ্রমিক-জনতা তাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।
২৪-২৬ অক্টোবর পঞ্চদশ পল্লীকবি আন্ত:ক্লাব বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় প্রাথমিক পর্যায়ে ৩২টি দলের অংশগ্রহণে নক আউট পর্বের বিতর্ক এবং নক আউট পরবর্তী ৩ রাউন্ড ট্যাব পর্যায়ের বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতায় ২৪ অক্টোবর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় এবং আজ শনিবার ২৬ অক্টোবর চূড়ান্ত পর্যায়ের বিতর্ক, পুরস্কার বিতরণী এবং সমাপনী অনুষ্ঠান হয়।
কবি জসীম উদ্দীন হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি তাজিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে কবি জসীম উদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম শাহীন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ, কবি জসীম উদ্দীন হল ডিবেটিং ক্লাবের মডারেটর মুহাম্মদ ইহসান-ইল-কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি অর্পিতা গোলদার, সাধারণ সম্পাদক আদনান মোস্তারি বক্তব্য রাখেন। সমাপনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি জসীম উদ্দীন হল ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুম আব্দুল্লাহ। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবারও পল্লীকবি আন্ত:ক্লাব বিতর্ক প্রতিযোগিতায় পল্লী-সাজে সাজানো হয়েছিলো কবি জসীম উদ্দীন হল প্রাঙ্গণ।
আপনার মতামত লিখুন :