আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শেষে গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ করবে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজের সঙ্গে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বুধবার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েল এই খবর জানিয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ হওয়ার বেশ কিছুদিন পর গাজা উপত্যকায় উন্মুক্ত নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। কোনও আন্তর্জাতিক শক্তিকে এই মিশনের দায়িত্ব দেওয়া যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ‘গাজাকে অবশ্যই নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে। অঞ্চলটিকে নিরস্ত্রীকরণ করতে সক্ষম এমন একটি শক্তিই আছে—আর তা হলো ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী।’
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য এই ধরনের একটি বাহিনীর অস্পষ্ট প্রস্তাবের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোন আন্তর্জাতিক শক্তি এর জন্য দায়ী হতে পারে না।’
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শেষে এর নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নেবে তা নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে আরব রাষ্ট্রগুলো অঞ্চলটিতে সেনা পাঠাতে পারে এমন পরামর্শের কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে এমন প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে আরব দেশগুলো।
নেতানিয়াহু বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাহিনী ইসরায়েলের শত্রু বাহিনীগুলো সঙ্গে অসামরিককরণে ব্যর্থ হয়েছে। তাই গাজায় তিনি এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।
এসময় ৭ অক্টোবরের নৃশংসতার সময় হামাসের সংঘঠিত গুরুতর যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে ব্যর্থ হওয়া জাতিসংঘ, মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং নারী অধিকার বিষয়ক সংস্থাগুলোর নিন্দা করেছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, এ বিষয়ে অনেক গোষ্ঠীর নীরব ছিল কারণ নিপীড়নের শিকার হওয়া নারীরা ইহুদি।
ইসরায়েলি এ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি আশা করি সকল সভ্য নেতা, সরকার, জাতি, এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলবেন।’
গাজায় বর্তমান অভিযান সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ভালো অবস্থানে রয়েছে। আইডিএফ সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের ব্যাটালিয়ন কমান্ডারদের প্রায় অর্ধেককে হত্যা করার কথা উল্লেখ করে নেতানিয়াহু বলেন, হামাসকে ধ্বংসের লক্ষ্যে ভালো অগ্রগতি করছে আইডিএফ।
যুদ্ধের অগ্রগতি সম্পর্কে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গ্যালান্ট বলেন, হামাস ধীরে ধীরে গাজার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে আর আইডিএফ তার লক্ষ্যগুলো অর্জন করছে।
তার ভাষ্যমতে, ‘গাজা শহরে যা ঘটেছে তা এখন খান ইউনিসে ঘটছে…সাফল্যের সঙ্গেই ঘটছে।’
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আরও বলেন, ‘হামাসের নেতারা এখন ভালোভাবেই বুঝেছে যে তাদের বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসছে না—না ইরানিরা, না হিজবুল্লাহ।’
এসময় জিম্মিদের পরিবারের উদ্দেশে গ্যালান্ট বলেন, ‘কোনো রকম গাফিলতি ছাড়াই সব জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে সরকার সম্পূর্ণ নিবেদিত ছিল।’ এবার স্থল অভিযানের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে আইডিএফ।
তিনি বলেন, জাতি হিসেবে এটা আমাদের কর্তব্য, প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটা আমাদের কর্তব্য এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব।
‘এখন শুধু একটি কাজই বৈধ: হামাসের বিরুদ্ধে জয়লাভ করা, তাদের আঘাত করা এবং তাদের নির্মূল করা—তাদের শাসন ও সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করা এবং জিম্মিদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা।’
আপনার মতামত লিখুন :