আশ্রয় ডেস্ক
ঘরোয়া ক্রিকেটে তেমন কিছু না করেই জাতীয় দলে ফিরেছেন সৌম্য সরকার। যা নিয়ে হচ্ছিল বিস্তর সমালোচনাও। সেই সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে ব্যাট হাতে দারুণ জবাব দিলেন বাঁহাতি ব্যটার। যদিও তার প্রত্যাবর্তন ম্যাচটিতে হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। সৌম্যর বিধ্বসী ইনিংসের দিনে সতীর্থরা ছিলেন দর্শক হয়ে। তাতে নেলসনের ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে বাংলাদেশ সংগ্রহ করতে পেরেছে মোটে ২৯১ রান। সেই লক্ষ্য স্বাগতিকরা ২২ বল আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে ছুঁয়ে ফেলেছে।
২০০৭ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিয়মিত ওয়ানডে সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ। ২০০৭, ২০১০, ২০১৬, ২০১৯ ও ২০২১ এই পাঁচবার খেলতে গিয়ে প্রতিবারই পেয়েছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা। এবারও সফরকারীরা সেই পথের পথিক হতে যাচ্ছে। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটিতে হেরে ইতোমধ্যে সিরিজ হার নিশ্চিত হয়েছে।
প্রতি সিরিজে বাংলাদেশের হারের মূল কারণ ব্যাটিং ব্যর্থতা। প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় বাংলাদেশ তিনশ পার করতে পারেনি। এদিন সৌম্য ছাড়া বাকি ব্যাটারদের মধ্যে কেবল মুশফিকই কিছুটা প্রতিরোধ গড়তে পেরেছেন।
সাক্সটন ওভালে প্রথমে টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু শুরুতেই কিউই পেসারদের তাণ্ডবে ৪৪ রানে বাংলাদেশ হারায় তিন উইকেট। দলের তিন টপ অর্ডার ব্যাটার এনামুল হক বিজয় ২, নাজমুল হোসেন শান্ত ৬ ও লিটন দাস ফেরেন ৬ রানে। এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থেকে সঙ্গীদের আশা যাওয়ার সাক্ষী হয়েছেন সৌম্য। মূলত পঞ্চম উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৯১ রানের জুটিতে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেওয়া গেছে। ৩৫তম ওভারে মুশফিককে ৪৫ রানে ফিরিয়ে কিউইদের ব্রেক-থ্রু এনে দেন জ্যাকব-ডাফি। ততক্ষণে ৬ ইনিংস পর সৌম্য হাফসেঞ্চুরির কোটা পূরণ করতে পেরেছেন।
মুশফিক আউট হলেও সৌম্যর বিস্ফোরক ব্যাটিং চলতে থাকে নেলসনের ২২ গজে। ষষ্ঠ উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে ৬১ রানের দারুণ একটি জুটি গড়েন তিনি। যেখানে মিরাজের অবদান ১৯, আর বাকি ৪২ রান ছিল সৌম্যর। আর তাতে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান এই ওপেনার। সৌম্যর কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরিটি এসেছে ২৬ ইনিংস পর। শুধু সেঞ্চুরিতেই থেমে থাকেননি তিনি। পাঁচ বছর পর ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। ছাড়িয়ে গেছেন নিজের সর্বোচ্চ ইনিংস ১২৭-কে। আর তাতে শচীন টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। এশিয়ান ব্যাটার হিসেবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড এখন তার। ২০০৯ সালে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে শচীন ১৬৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।
বাঁহাতি এই ব্যাটার আউট হন ৫০তম ওভারের প্রথম বলে। উইলিয়াম ও’রোয়ার্কের বলে আউট হওয়ার আগে ১৫১ বলে ১৬৯ রানে থামে তার অসাধারণ ইনিংস। মেরেছেন ২২টি চার ও ২টি ছক্কার বাউন্ডারি।
অথচ শুরুতে বাঁহাতি এই ব্যাটার ক্রিজে থাকা মানেই ছিল স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে সৌম্য যেন ব্যাটিং করতে ভুলে গেছেন। বুধবার এই ইনিংসের মধ্য দিয়ে সৌম্য হয়তো নতুন শুরুর পথটা পেয়ে যাবেন। আত্মবিশ্বাসের যে ঘাটতি ছিল, নিজের ব্যাটিং স্কিল নিয়ে থাকা সংশয়টুকুও হয়তো দূর হয়ে যাবে তাতে। তবে সৌম্যর আউটের পর খুব বেশি রান তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। ইনিংসের ১ বল আগেই সফরকারীরা অলআউট হয়েছে ২৯১ রানে।
কিউই কন্ডিশনে ২৯২ রানের লক্ষ্য কঠিন কিছু নয়। মাঝারি মানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে কিউই দুই ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র ও উইল ইয়াং তাণ্ডব চালান বাংলাদেশের ওপর। ৩৩ বলে ৪৫ রান করে হাসান মুরাদের বলে রাচিন আউট হলেও ম্যাচে তার প্রভাব পড়েনি। তিন নম্বরে নামা হেনরি নিকোলস জুটি বাঁধেন ইয়াংয়ের সাথে। তৃতীয় উইকেটে তারা গড়েন গুরুত্বপূর্ণ ১২৮ রানের জুটি। মাত্র ১১ রানের জন্য টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি মিস করেন ইয়াং। ৯৪ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৮৯ রানের ইনিংস খেলে হাসান মুরাদকে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি।
ইয়াংয়ের দেখানো পথই যেন অনুসরণ করেছেন নিকোলস। ৯৫ রানে শরিফুলের বলে রিশাদকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মিডল অর্ডার এই ব্যাটার।৯৯ বলে ৮ চার ১ ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান তিনি। ২৬০ রানে তিন উইকেট হারানোর পর বাকি পথটুকু অনায়াসে পার করেন টম ল্যাথাম ও টম ব্লান্ডেল। তাদের অবিচ্ছিন্ন ৩৬ রানের জুটিতে ২২ বল আগে ৭ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ড। এই জয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ এক ম্যাচ হাতে রেখেই নিশ্চিত করেছে স্বাগতিকরা।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে শরিফুল দুটি এবং হাসান মুরাদ একটি উইকেট নিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :