২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে শত শত মণ ইলিশ এসেছে রাজবাড়ীর বিভিন্ন মোকামে। এত কম সময়ে এই বিপুল পরিমাণ ইলিশের জোগানে বিস্মিত সবাই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষে মাছ ধরতে পদ্মা নদীতে গেছে জেলেরা। সেগুলো ফিরতে আরও ১-২ দিন সময় লাগবে। এর আগে অভ্যন্তর ভাগের নদ-নদী থেকে কিছু ইলিশ ধরা পড়তে পারে। তবে তার পরিমাণ কখনোই শত শত মণ হওয়ার কথা না।
একাধিক আড়ত মালিক বলেন, ‘মাত্র ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে আসা এই মাছ কোনোভাবেই শুক্রবার ভোর রাতের নয়। এইটুকু সময়ে এত ইলিশ ধরা অসম্ভব। নিষেধাজ্ঞার সময়ে চুরি করে ধরা হয়েছে এসব ইলিশ। বরফ দিয়ে নয়তো ফ্রিজে সংরক্ষণের পর শুক্রবারে তোলা হয়েছে মোকামে। শুধু রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া মোকামেই যদি এত চোরাই ইলিশ আসে তো পুরো দেশের অবস্থা কী হয়েছে সেটা ভেবে দেখুন।’ এদিকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারে ইলিশ মিললেও তুলনামূলক দাম কম ছিল কিছুটা।
প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় গত ১২ অক্টোবর থেকে গতকাল ২ নভেম্বর পর্যন্ত পদ্মা নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় শেষ হয় এ নিষেধাজ্ঞা। এরপরই জাল নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে নামেন জেলেরা।
দৌলতদিয়া মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী দুলাল মন্ডল বলেন, ‘শুক্রবার সকালে কম করে হলেও ১৫-২০ মণ ইলিশ এসেছে। যার অধিকাংশই হালকা লালচে। সাধারণত বরফ দিয়ে ৪-৫ দিনের বেশি রাখলে ইলিশের চেহারা এমন হয়। দেখেই বোঝা যায়, এগুলো নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে ধরা। রাতে অথবা চুরি করে গোপনে ধরা হয়েছে। অভিযানের ভয়ে বাজারে না এনে বরফ দিয়ে অথবা বড় ফ্রিজে সংরক্ষণের পর আনা হয়েছে মোকামে।’
আরেক ব্যবসায়ী বাবুল বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় চোরাইভাবে মাছ শিকার করে সংরক্ষণ এবং নিষেধাজ্ঞা শেষে মোকামে এনে বিক্রি করা হচ্ছে। এর সঙ্গে কিছু অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীও জড়িত।’
আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘যেসব মাছ শুক্রবারে এসেছে তার সিংহভাগই মা ইলিশ। প্রায় সব মাছের পেটেই ডিম। বহু বছর ধরে এই মোকামে ব্যবসা করছি। অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, লোকাল জেলে কিংবা পদ্মা নদীতে মাত্র ৫-৬ ঘণ্টায় এত ইলিশ ধরা অসম্ভব। সরকার নিষেধাজ্ঞা দিলো। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে অভিযান চালালো। অথচ অভিযান ফাঁকি দিয়ে ধরা হলো মণকে মণ ইলিশ। তাহলে এ নিষেধাজ্ঞার ফল কী?’
নিষেধাজ্ঞা উঠতেই শত শত মণ ইলিশ এসেছে বাজারে
মোকাম ঘুরে দেখা গেছে, ৭শ গ্রাম থেকে ১ কেজির নিচে ইলিশ প্রতি কেজি ১২-১৫শ টাকা। এর নিচে অর্থাৎ ৩শ থেকে ৭শ গ্রাম পর্যন্ত ইলিশের কেজি ছিল ৫০০-৬০০ টাকা।
দৌলতদিয়া বাজারে সকালে মাছ কিনতে আসা ক্রেতা ছিদ্দিক মিয়া বলেন, ‘বিগত দিনের তুলনায় আজকে মাছের দাম কিছুটা কম। বড় সাইজের পাঙাস (৮-১০) কেজি ওজনের প্রতি কেজি কিনেছি ৮০০ টাকা যা বিগত দিনে কিনেছি ১২শ টাকা কেজি এবং ১ কেজির ইলিশ কিনেছি ১৬শ টাকা কেজি যা বিগত দিনে ২০০০-২২০০শ টাকা কেজি কিনতে হয়েছে।’ তবে তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষে এত কম সময়ে এত পরিমাণ ইলিশ ধরা সম্ভব নয়। এগুলো প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে জেলেরা লুকিয়ে নদী থেকে মেরেছে। তবে জেলেরা এ কাজগুলো ঠিক করেনি। কেননা, সরকার মা ইলিশ রক্ষায় কঠোর ভূমিকা রাখে।
নিষেধাজ্ঞার সময়েই মাছগুলো ধরা হয় বলছেন ব্যবসায়ীরা
নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার ৫-৬ ঘণ্টায় ইলিশ ধরা পড়ার ব্যাপারে রাজবাড়ী সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল রাজীব বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর লুকিয়ে ইলিশ ধরা প্রবণতা অনেক কমেছে। আমি বলবো না পুরোটা কমেছে। এখনও অনেক জেলে আছে যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করে থাকেন। তবে আমরা এবার আমাদের অভিযানের ফলে এই প্রবণতা অনেকটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। তবে জেলে ও আমাদের সবাইকে আরও অনেক সচেতন হতে হবে। ইলিশ মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ না শিকার করা ও মাছ কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবেই আমরা শতভাগ সফল হতে পারবো বলে আমি মনে করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় আমরা নিয়মিত নদীতে অভিযান পরিচালনা করেছি। নদীর অনেক স্থান আছে যেখানে সরু চ্যানেল অল্প পানিতে জেলেরা তাদের নৌকাগুলো কৌশলে ঠেলে নিয়ে যায়। আমরা সেসব স্থানে স্পিডবোট, ট্রলার নিয়ে যেতে পারি না। তবে একটু কষ্ট করে জেলেদের মা ইলিশ শিকারে সচেতন হতে হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :